সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা কার্যকরের পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত করেছে সরকার।
জানুয়ারি থেকে ভাতা কার্যকরের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, অর্থনীতির বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে তা থেকে সরে এসেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
সরকারের মতে, এই ভাতা কার্যকর করলে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ বাড়তে পারে এবং সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সরকারের অবস্থান
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মহার্ঘ ভাতা দিতে বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হতো। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই বাড়তি অর্থ ব্যয় করা সরকারের জন্য কঠিন।
গতকাল প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় মহার্ঘ ভাতার নথি ফেরত পাঠিয়ে জানিয়েছে, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে এলে পরবর্তী অর্থবছরের বাজেটে বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।
মহার্ঘ ভাতার প্রস্তাব
অর্থ বিভাগ ১১তম থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ এবং প্রথম থেকে দশম গ্রেডের কর্মচারীদের ১০-১৫ শতাংশ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করেছিল। এই প্রস্তাব বাস্তবায়নে সংশোধিত বাজেটে প্রয়োজন হতো প্রায় ৫ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। তবে অর্থনৈতিক সংকট এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাবের কারণে এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
বিশ্লেষকদের মতামত
বিশ্লেষকরা মনে করেন, মহার্ঘ ভাতা কার্যকর করলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে এবং এটি সমাজে বৈষম্য তৈরি করবে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, “অন্য খাতের বেতন বা সুবিধা মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সংগতি রেখে বাড়েনি। এই পরিস্থিতিতে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে তা ন্যায্যতা লঙ্ঘন করবে।”
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “সরকারি চাকরিজীবীরা বর্তমানে বেসরকারি খাতের তুলনায় ভালো বেতন পাচ্ছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার অর্থনৈতিক ভিত্তি নেই।”
সরকার জানিয়েছে, মহার্ঘ ভাতা আপাতত বন্ধ থাকলেও ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এটি বিবেচনা করা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতে, নতুন অর্থবছরের বাজেটে বিষয়টি পুনরায় আলোচনায় আসতে পারে।
সরকারি চাকরিজীবীরা বর্তমানে মূল বেতনের ১০ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পাচ্ছেন। তবে মহার্ঘ ভাতা কার্যকরের দাবিতে বিভিন্ন মহল থেকে চাপ আসছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাবনা কম।
এসআর
মন্তব্য করুন: