[email protected] বৃহঃস্পতিবার, ২ জানুয়ারি ২০২৫
১৯ পৌষ ১৪৩১

৫ বছরে ২০০-এর বেশি প্রাণহানি, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে কেন পরিণত হলো মরণফাঁদে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ ৯:২৬ এএম

ফাইল  ছবি

পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল এক্সপ্রেসওয়ে হিসেবে খ্যাত ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক উদ্বোধনের পর থেকেই একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে, যা এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।

২০২০ সালের মার্চে উদ্বোধনের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ বছরে এই এক্সপ্রেসওয়েতে ২০০-এর বেশি প্রাণহানি ঘটেছে।

২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়েতে ৭৯টি দুর্ঘটনায় ৬৫ জন নিহত ও ৬৭ জন গুরুতর আহত হন। ২০২২ সালে ১৯৬টি দুর্ঘটনায় ৭৪ জন মারা যান, আহত হন ২৬৫ জন। ২০২৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬৪টি দুর্ঘটনায় ২২ জন নিহত এবং ৮৫ জন আহত হয়েছেন। বিশেষত, ডিসেম্বর মাসে একাধিক প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এক্সপ্রেসওয়েতে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর প্রবণতা বেড়েছে। কুয়াশা, ঝড়-বৃষ্টি এবং রাতের আঁধারে সড়কে অসতর্ক চালকদের কারণে দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতিরাতে কুয়াশা পড়ছে, যা গাড়ির গতির ওপর প্রভাব ফেলছে। কিছু গাড়ি ধীরগতিতে চললেও অনেকেই সীমা অতিক্রম করে বেপরোয়া গতি নিয়ে চলেন, যার ফলে দুর্ঘটনা বেড়েছে।

সম্প্রতি ধলেশ্বরী টোল প্লাজায় এক বাসচাপায় দুই পরিবারের ছয় জন নিহত হন এবং ৫ জন আহত হন। ২২ ডিসেম্বর কুয়াশার মধ্যে এক্সপ্রেসওয়েতে ৪ থেকে ৫ কিলোমিটারব্যাপী একাধিক গাড়ির সংঘর্ষ ঘটে, যাতে একজন প্রাণ হারান।

এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনাগুলোর জন্য পুলিশের অবহেলা, সড়ক সাইন ও সংকেতের অপ্রতুলতা এবং সিসিটিভি নজরদারির অভাব দায়ী। ঘন কুয়াশায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণে না আসলে পেছন থেকে একের পর এক গাড়ি ধাক্কা দেয়, যার ফলে দুর্ঘটনা বাড়ে। এজন্য পুলিশসহ সড়ক কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা দেওয়ান আজাদ হোসেন জানান, দুর্ঘটনাগুলোর জন্য ঘন কুয়াশা, ফগ লাইট ব্যবহার না করা, বেপরোয়া গতি, চালকদের গাফিলতি, ঘুমঘুম ভাব এবং ট্রাফিক আইন না মানা দায়ী। এসব সমস্যা রাতের সময় এবং ঘন কুয়াশায় বেশি দেখা যায়। তিনি জানান, চালকদের সচেতনতা, বাস্তবসম্মত প্রশিক্ষণ এবং ট্রাফিক আইন মেনে গাড়ি চালানোই এসব দুর্ঘটনা কমানোর প্রধান উপায়।

হাসাড়া হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, পুলিশ প্রতিদিন রাতে দুটি গাড়ি নিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে এলাকায় টহল দেয় এবং চালকদের ধীরগতিতে গাড়ি চালাতে অনুরোধ করে। তবে পুলিশের উপস্থিতি শেষ হলে আবারও চালকরা বেপরোয়া গতি চালাতে থাকেন, যার ফলস্বরূপ দুর্ঘটনা ঘটে।

মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শামসুল আলম সরকার বলেন, দুর্ঘটনা কমাতে আইনি কার্যক্রম চালানো হচ্ছে এবং চালক ও পরিবহণ মালিকদের সচেতন করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে তিনি মনে করেন, পুরো জাতির সচেতনতা এবং নিয়মিত আইন প্রয়োগ ছাড়া এই দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে না।

 

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর