[email protected] বৃহঃস্পতিবার, ২ জানুয়ারি ২০২৫
১৯ পৌষ ১৪৩১

দুবাইতে আরও ৮৫০ বাংলাদেশির সম্পদের সন্ধান: অর্থ পাচারের নতুন তথ্য উদ্ঘাটন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০:২৫ এএম

ফাইল  ছবি

আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতাদের নামে-বেনামে অর্থ পাচারের তথ্যের ফিরিস্তি একেকটি রূপকথাকে হার মানিয়েছে।

পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে বর্তমান সরকার আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তা কামনা করেছে, পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ তদন্তও চলছে। এই পরিস্থিতিতে, দুবাইতে আরও ৮৫০ বাংলাদেশির সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে, যা তাদের আয়কর রিটার্নে দেখানো হয়নি।

এক টাস্কফোর্সের সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সাবরেজিস্ট্রি অফিসগুলোর সীমাবদ্ধতার কারণে অর্থ পাচারকারীদের সম্পত্তির তথ্য সংগ্রহ একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে এসব পাচারকারীরা নাম ও বেনামে সম্পদ গড়েছে। এই সম্পদগুলোর তথ্য জানাতে নিবন্ধন অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েও কাঙ্ক্ষিত সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি গাজীপুরে এক সন্দেহভাজনের সম্পত্তি থাকার সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার পরও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সাবরেজিস্ট্রি অফিসে চিঠি পাঠালে সেখানে কোনো সম্পত্তির তালিকা পাওয়া যায়নি। তবে, পরবর্তীতে পুলিশের নিজস্ব অনুসন্ধানে ওই ব্যক্তির নামে ৭০টি সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া যায়।

সম্পদের পুনরুদ্ধারে আরেকটি জটিলতা হলো, পাচারকারীরা অধিকাংশ সম্পত্তি বেনামে গড়েছে, ফলে আইনি জটিলতার কারণে সেগুলো জব্দ করা সম্ভব হচ্ছে না, যদিও পর্যাপ্ত তথ্য রয়েছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত একটি অর্থনৈতিক শ্বেতপত্রে জানানো হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ২৮ লাখ কোটি টাকা, যা গত ৫ বছরের জাতীয় বাজেটের চেয়ে বেশি। এই সময়ে, প্রতি বছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার বা ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে।

জাভেদ নামের এক উচ্চপদস্থ নেতা সম্প্রতি আয়কর বিভাগের কাছে তার সম্পদের পরিমাণ হিসেবে ১৮ কোটি টাকা উল্লেখ করেছেন, যেখানে তার বার্ষিক আয় মাত্র ৭৪ লাখ টাকা। যদিও তার আয়কর ফাইলে উল্লেখ করা হয়েছে মাত্র একটি গাড়ি, যার দাম ৯১ লাখ ৩৬ হাজার ৫০০ টাকা। এক্ষেত্রে, ব্যাংক স্থিতি হিসেবে ১ কোটি ৮৬ লাখ ৭২ হাজার ২৩৫ টাকা দেখানো হয়েছে। তবে, একটি আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, সাবেক এই মন্ত্রী যুক্তরাজ্যে ২৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে ৩৬০টি বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার সমান। ব্রিটেন ছাড়াও, দুবাই, নিউইয়র্ক, সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়াতে তার আরও ৫০০ বাড়ি রয়েছে, যার মূল্য প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলার বা ৮ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা।

সিআইসির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জাভেদের রিটার্ন পর্যালোচনার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন বিএফআইইউ থেকে প্রাপ্ত সম্পদের তালিকা যাচাই করতে দুবাই সরকারকে চিঠি পাঠানো হবে। একই সঙ্গে, দুবাইতে থাকা আরও ৮৫০ বাংলাদেশির সম্পত্তি শনাক্ত হয়েছে, যেগুলোর তথ্য তারা রিটার্নে প্রদর্শন করেননি। এসব ব্যক্তির সম্পদ অনুসন্ধানে শিগগিরই দুবাইয়ে দুটি পৃথক টিম পাঠানো হবে।

 

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর