দেশে প্রতিদিন প্রায় ১৫ কোটি মানুষ একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতল ব্যবহার করে, যা পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।
শহরে এ ধরনের বোতল পানির জন্য এবং গ্রামে কোমল পানীয়ের জন্য বেশি ব্যবহৃত হয়।
এসব বোতল থেকে নির্গত রাসায়নিক, যেমন বিসফেনল এ (বিপিএ), শরীরের হরমোন সিস্টেমে বিঘ্ন ঘটায় এবং দীর্ঘমেয়াদে ক্যানসারসহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
সম্প্রতি বেসরকারি সংস্থা ‘এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো)’ এর এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণাটি ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত পরিচালিত হয়।
গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৩.১৫ থেকে ৩.৮৪ বিলিয়ন একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতল ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে মাত্র ২১.৪ শতাংশ পুনর্ব্যবহার করা হয়। বাকি ৭৮.৬ শতাংশ বোতল পরিবেশে জমা হয়ে নালা বন্ধ, জলপথ দূষণ এবং মাইক্রোপ্লাস্টিকের মাত্রা বাড়াচ্ছে।
বক্তারা বলেন, পলিথিন টেরেফথ্যালেট (পিইটি) দিয়ে তৈরি এসব বোতল প্রায় ৪৫০ বছর অবিকৃত থাকে এবং সময়ের সঙ্গে মাইক্রোপ্লাস্টিকে রূপান্তরিত হয়ে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে। এটি খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, শহরের মাত্র ১৮.৪ শতাংশ এবং গ্রামের ৫.৫ শতাংশ মানুষ এসব প্লাস্টিকের স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন। প্রায় ৫১ শতাংশ শহুরে এবং ৪২ শতাংশ গ্রামীণ ভোক্তা বোতল একবার ব্যবহার করেই ফেলে দেয়।
এসডোর চেয়ারপারসন সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, “প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলায় আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। প্লাস্টিক বর্জ্য কমানো এবং পুনর্ব্যবহারের ব্যবস্থা উন্নত করা জরুরি।”
অধ্যাপক মো. আবুল হাশেম বলেন, “বিসফেনল এ এবং মাইক্রোপ্লাস্টিক আমাদের খাদ্যচক্রে ঢুকে পড়ছে, যা জনস্বাস্থ্য এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।”
এসডোর মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন জানান, “বাংলাদেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বর্তমানে প্লাস্টিক সংকট মোকাবিলায় সক্ষম নয়। নীতিনির্ধারক, ব্যবসায়ী এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।”
এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দিকা সুলতানা বলেন, “এই সংকট মোকাবিলায় টেকসই বিকল্প গ্রহণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং কড়া নীতিমালা প্রয়োগের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব সমাধান গ্রহণ করা জরুরি।
প্লাস্টিক বোতলের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে জনগণকে সচেতন করা এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
এসআর
মন্তব্য করুন: