পদোন্নতির বিষয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের খসড়া প্রস্তাব নিয়ে বিসিএস প্রশাসন, স্বাস্থ্য ও সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
তাদের দাবি, কমিশন কোনো আলাপ-আলোচনা, সমীক্ষা বা মতামত ছাড়াই একতরফা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যা অগ্রহণযোগ্য।
প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা কমিশনকে খসড়া প্রস্তাব থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) কমিশনের সুপারিশের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, কমিশনের এই পদক্ষেপ প্রশাসন ক্যাডারের স্বার্থবিরোধী এবং এটি আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্ব উসকে দিতে পারে।
শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের কাছে কমিশনের কোনো প্রতিনিধি নেই, এবং কমিশনের উদ্দেশ্য তাদের কাছে স্পষ্ট নয়। বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, তারা পেশাগত সুযোগ-সুবিধা এবং জনস্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছেন, কিন্তু কখনও ক্যাডার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা বলেননি। তারা জানান, কমিশন তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা বা মতামত গ্রহণ করেনি, যা তাদের মর্মাহত করেছে।
পূর্বে কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী জানিয়েছিলেন, ভবিষ্যতে উপসচিব ও যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতির জন্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হবে এবং প্রশাসন ক্যাডারের ৫০ শতাংশ কর্মকর্তাকে এই পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫ শতাংশ এবং অন্যান্য ক্যাডারের ২৫ শতাংশ পদোন্নতি পায়।
এ নিয়ে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএসএ) প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং বলেছেন, কমিশন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মতামত ছাড়াই এই সুপারিশ করেছে, যা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। বিএএসএ মনে করে, কমিশনের এই একতরফা সিদ্ধান্ত প্রশাসন সংস্কারের উদ্যোগকে দুর্বল করতে পারে।
এছাড়া, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠনও কমিশনের সুপারিশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা দাবি করেছে, কমিশন তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছে, যা সরকারের শিক্ষা খাতে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। তারা জানায়, এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে শিক্ষা খাতের সংস্কার স্থবির হয়ে যাবে।
এদিকে, স্বাস্থ্য ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনও কমিশনের সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে, স্বাস্থ্য খাতকে ক্যাডারবহির্ভূত করার সুপারিশটি মেধাভিত্তিক জনপ্রশাসন তৈরির প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে এবং এটি প্রশাসনিক সংস্কারের জন্য ক্ষতিকর হবে।
তারা বলেন, স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে অভিজ্ঞ ও উপযুক্ত কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া উচিত, যা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী ও বিজ্ঞানভিত্তিক করবে। কমিশনের এই সুপারিশের বিরুদ্ধে তারা একতাবদ্ধভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
তারা অবিলম্বে এই সুপারিশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন এবং জানিয়েছেন যে, কমিশন যদি তাদের সুপারিশে পরিবর্তন না আনে, তবে প্রশাসনিক সংস্কার উদ্যোগ ব্যর্থ হবে।
এসআর
মন্তব্য করুন: