বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর সাবেক সদস্য মতিউর রহমান এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ছয়টি মামলা দায়ের করেছে।
এসব মামলায় তাঁদের বিরুদ্ধে ৮৫ কোটি ৩২ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে। বেনজীর আহমেদ, মতিউর রহমানসহ তাঁদের স্ত্রী ও সন্তানদেরও আসামি করা হয়েছে।
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে এসব মামলা দায়ের করা হয়। দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, বেনজীর পরিবারের বিরুদ্ধে চারটি মামলায় ৭৪ কোটি ১৩ লাখ ৩৯ হাজার টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
একটি মামলায় বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ৯ কোটি ৪৪ লাখ ৬৪ হাজার ৭৫১ টাকার অবৈধ সম্পদ এবং ২ কোটি ৬২ লাখ ৮৯ হাজার ৬০ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে। অন্য একটি মামলায় বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী জীসান মির্জাকে আসামি করা হয়েছে। জীসান মির্জার বিরুদ্ধে ৩১ কোটি ৬৯ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৯ টাকার অবৈধ সম্পদ এবং ১৬ কোটি ১ লাখ ৭১ হাজার ৩৩৬ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে। দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে, এই সম্পদ বেনজীর আহমেদের অবৈধ আয়ের মাধ্যমে অর্জিত।
একইভাবে, বেনজীর আহমেদ এবং তার মেয়ে ফারহিন রিশতা বেনজীর বিরুদ্ধে ৮ কোটি ৭৫ লাখ ২৭৪ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। অন্য একটি মামলায় বেনজীর আহমেদ ও তার মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৫৫ হাজার ৮৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুদক আইন ২০০৪-এর ২৭ (১) ও ২৬ (২) ধারায় এসব অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
গত মে মাসে দুদক, বেনজীর আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা বিভিন্ন স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির দলিল, ঢাকায় ফ্ল্যাট এবং কোম্পানির শেয়ার জব্দের (ক্রোক) নির্দেশ দেয় ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন। এর মধ্যে গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাট, সাভারের একটি জমি, মাদারীপুরে ১১৪টি দলিলের সম্পত্তি এবং ৮৩টি ক্রয়কৃত সম্পত্তি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এর আগে ২২ এপ্রিল দুদক, বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জিসান মির্জা, দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাশিন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে।
অন্যদিকে, মতিউর রহমান ও তার দ্বিতীয় স্ত্রীর বিরুদ্ধে ১১ কোটি ১৮ লাখ ৮৬ হাজার ১২০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে। দুটি মামলায় মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ৫ কোটি ২৮ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩৯ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ এবং ১ কোটি ২৭ লাখ ৬৬ হাজার ২১৬ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে। অপর মামলায় তার দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিবলীর বিরুদ্ধে ১ কোটি ৮৭ লাখ ১৫ হাজার ৪৯০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ২ কোটি ৭৫ লাখ ২৮ হাজার ৪৭৫ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত ঈদুল আযহার আগে মোহাম্মদপুরের সাদিক এগ্রো থেকে ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কেনার ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ভাইরাল হয়। এরপরই এনবিআর সদস্য মতিউর রহমান ও তার পরিবারের বিপুল সম্পদের খবর সামনে আসে, যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।
এতদিন আত্মগোপন করলেও, এখন দুদক তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে এবং তাদের সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
এসআর
মন্তব্য করুন: