দেশে বাজার সিন্ডিকেট যেন একটি অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাজারের বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের জন্য জীবনযাত্রা চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, ডিম, মাছ-মাংসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। শেখ হাসিনা সরকারের আমলেও এই সিন্ডিকেট ভাঙতে সরকারের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। বরং নানা সময়ে শুল্ক ছাড় বা পণ্যের দাম বাড়িয়ে সিন্ডিকেটের হাতে সুবিধা তুলে দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণের আশ্বাস দিলেও এর কোনো বাস্তব ফল পাওয়া যাচ্ছে না। জনগণ আয়ের সঙ্গে ব্যয় সামলাতে কষ্ট পাচ্ছে, আর বাজারের অবস্থাও ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর একই সময়ে তুলনায় বর্তমানে চালের দাম সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ বেশি। এছাড়া, লিটারপ্রতি ভোজ্যতেল ৯ শতাংশ, কেজিপ্রতি ডাল ৩ শতাংশ, রসুন ১৫.৯১ শতাংশ, হলুদ ২০ শতাংশ এবং মাছ-মাংসের দাম ৭ থেকে ১৫ শতাংশ বেড়ে গেছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শেখ হাসিনার সরকারের আমলে ভোক্তারা কোনও সুফল পায়নি, ফলে মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। তারা দ্রুত পরিবর্তন দেখতে চায়, কারণ এ সরকার বিপ্লবী চেতনায় প্রতিষ্ঠিত, এবং জনগণ এখন অ্যাকশন দেখতে চায়। একাধিক সরকারি সংস্থা খুচরা বাজারে তদারকি করলেও শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে কার্যত কোনো পরিবর্তন আসছে না।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, চলতি বছরের জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি ১৬ বছরের রেকর্ড ভেঙে ১৪ দশমিক ১ শতাংশে পৌঁছেছে। নভেম্বর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১৪ দশমিক ১ শতাংশ, এবং খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদ এম কে মুজেরী বলেন, "সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্যদের চিহ্নিত করতে হবে। পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত যেসব শক্তিশালী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ানোর জন্য শক্তি ব্যবহার করে, তাদের খুঁজে বের করতে হবে। পণ্যের মূল্য শৃঙ্খল বিচার করে এবং কারা দাম নিয়ন্ত্রণ করছে তা চিহ্নিত করলে সিন্ডিকেট ভাঙা সহজ হবে।"
বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, "সরকারকে সিন্ডিকেট ধরতে গোয়েন্দাগিরি করতে হবে। যেসব বাজারে সিন্ডিকেটের গন্ধ পাওয়া যায়, যেমন চাল, পেঁয়াজ, তেল এবং চিনির বাজার, সেখানে খোঁজ নিতে হবে। বড় বড় বাজার খেলোয়াড়দের চিহ্নিত করতে হবে এবং তাদের গুদামের তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।"
কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাবেক সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, "সরকার জানে কারা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে এবং কীভাবে বাড়াচ্ছে। দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হলে পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে, তবে কেন তা হচ্ছে না তা তদন্ত করা দরকার।"
এদিকে, সয়াবিন তেলের সংকট সৃষ্টি হওয়ায় এবং বাজার থেকে এটি উধাও হয়ে যাওয়ায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান কঠোর অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন। রোববার বাজার অভিযানে গিয়ে এই নির্দেশনা দেন তিনি।
এসআর
মন্তব্য করুন: