পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ঢাকার ভিসানীতি শিথিল, ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগ

বাংলাদেশ সম্প্রতি পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ছাড়পত্র (সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স) প্রয়োজনীয়তার শর্ত তুলে নিয়েছে, যা দেশের কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

২০১৯ সালে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের সংকট এবং নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্সের শর্ত আরোপ করা হয়েছিল। তবে ২০২৪ সালের ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা পরিষেবা বিভাগ (SSD) এই শর্তটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, সম্প্রতি পাকিস্তানের হাই-কমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ ঢাকায় বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে এই নীতির পরিবর্তন করা হয়।

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের উষ্ণতা

এ বছরই বাংলাদেশ সরকার করাচি থেকে চট্টগ্রামে সরাসরি কার্গো জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছিল, যা দুই দেশের সম্পর্কের উষ্ণতার আরও একটি উদাহরণ। পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ উভয়েই এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্কের উন্নতির সূচনা হতে পারে।

ভারতের উদ্বেগ এবং নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশের ভিসা নীতি পরিবর্তন ভারতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের মতে, এই পরিবর্তন ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে এবং দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় আনতে পারে। সিডনি পলিসি অ্যান্ড অ্যানালাইসিস সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক মুবাশার হাসান মন্তব্য করেছেন, "বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে জানিয়ে দিচ্ছে যে, তারা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিকে আর ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে চায় না।" তবে তিনি মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদে এটি বাংলাদেশের জন্য কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

ভারতের প্রতিবেশী নীতি সম্পর্কেও উদ্বেগ রয়েছে, বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ সরকার ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে চাইলেও ভারতের পক্ষ থেকে তেমন কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। এই পরিস্থিতি দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা এবং ভূরাজনীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

নিরাপত্তার প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের সম্পর্কের উন্নতির ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চরমপন্থি গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম বাড়তে পারে, যা ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে। বাংলাদেশের এই পদক্ষেপ ভারতীয় নিরাপত্তা নীতিতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।

এই পরিবর্তন বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার সংকেত দিচ্ছে, তবে এটি ভারতের জন্য একটি বড় নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জও হতে পারে।