[email protected] শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি ২০২৫
২৭ পৌষ ১৪৩১

হাসিনার রাতের ভোটে সহায়তাকারী ডিসিদের ভাগ্য কী?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ৪:১১ পিএম
আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ৪:৫৬ পিএম

ফাইল ছবি

বিগত সরকারের আমলে, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনগুলোতে রাতে ভোট গ্রহণ এবং ব্যাপক জালিয়াতির ঘটনায় সহায়তাকারী জেলা প্রশাসকদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থান নিতে যাচ্ছে।

 অভিযোগ রয়েছে, তারা রাতের ভোট গ্রহণের আগে বা ভোটের দিন ব্যাপক জালিয়াতি ও ভুয়া নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

সরকার এখন এই ডিসি ও বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চাচ্ছে। তাদের মধ্যে যারা এখনও সরকারি চাকরিতে রয়েছেন, তারা পদোন্নতিতে সমস্যা সম্মুখীন হতে পারেন। ইতোমধ্যে সাবেক সমাজকল্যাণ সচিব মো. ইসমাইল হোসেনকে বাধ্যতামূলক অবসর পাঠানো হয়েছে। তিনি ২০১৪ সালের নির্বাচনে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ছিলেন। সাবেক ডিসিদের মধ্যে আরও অনেককে বাধ্যতামূলক অবসর বা বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হতে পারে।

জনপ্রশাসনের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস-উর-রহমান জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে এবং এ সম্পর্কে সর্বশেষ অগ্রগতি জানতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছেন।

সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনগুলিতে অংশ নেওয়া ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে যারা নির্বাচনকালীন জালিয়াতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন, তাদের ওপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে সরকার চায়। অনেককে ইতোমধ্যে ‘ওএসডি’ করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানা যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু কর্মকর্তার মতে, এদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের প্রতি অবিচারের অভিযোগ রয়েছে, কারণ তারা স্বৈরাচারী সরকারকে সহযোগিতা করে ভোটাধিকারকে ক্ষুন্ন করেছেন এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে জড়িত। এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম এবং বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএসএ) শাস্তির দাবি জানিয়েছে।

এবিএম আব্দুস সাত্তার, বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের আহ্বায়ক, বলেছেন, "এরা শুধু গণতন্ত্রকেই হত্যা করেননি, তারা রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ করেছেন। আমরা সরকারের কাছে তাদের চাকরি থেকে অপসারণের পাশাপাশি আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।"

এদিকে, ২০২৪ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী লালমনিরহাটের ডিসি মোহাম্মদ উল্যাহ বলেছেন, "আমরা কোনো পক্ষপাতিত্ব করিনি, কারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল না। বড় রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নেননি, তাই কোনো পক্ষ থেকে হস্তক্ষেপের প্রশ্ন ছিল না।"

মৌলভীবাজারের ডিসি ড. ঊর্মি বিনতে সালাম জানিয়েছেন, তিনি কখনোই পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে অভিযুক্ত হননি এবং সরকারি দায়িত্ব পালনকালে তিনি সর্বদাই নিরপেক্ষ ছিলেন।

এছাড়া, ২০১৮ সালের নির্বাচনে দিনের ভোট রাতের আগেই সম্পন্ন করতে সহায়তা করা কর্মকর্তাদের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব মো. মাজেদুর রহমান খানও ছিলেন। তিনি বলেছেন, "বিষয়টি স্পর্শকাতর, আমি সরাসরি কথা বলতে চাই না।"

লক্ষ্মীপুরের সাবেক ডিসি অঞ্জন চন্দ্র পালও এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তাকে ফোন করলে তিনি ইঙ্গিত দেন, অফিসে দেখা করে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে।

এখন প্রশ্ন হল, এসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে কি না, তা সরকারের পরবর্তী সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।

 

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর