[email protected] রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
১৫ পৌষ ১৪৩১

সংসদে প্রধানমন্ত্রী

দেশের অর্থনীতিতে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের প্রভাব আসতে পারে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৯ মে ২০২৪ ১২:৫৬ পিএম

গতকাল সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ তথ্য জানান।

মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টির যে আভাস দেখা যাচ্ছে, তা বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে। দেশের অর্থনীতিতে এই সংঘাতের কিছুটা প্রভাব আসতে পারে। তবে সরকার এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।  গতকাল সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ তথ্য জানান। সরকারদলীয় সংসদ সদস্য সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুলের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিশ্ববাজারের অস্থিতিশীলতা, বাজার ব্যবস্থাপনায় অসামঞ্জস্যতা এবং বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে দেশের মূল্যস্ফীতি কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ছাড়া, সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে পণ্যের সাপ্লাই-চেইন ক্ষতিগ্রস্ত হলে মূলত ইরান বা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে রপ্তানি সংশ্লিষ্ট পরিবহন খরচ বাড়তে পারে। এতে পণ্য তৈরি ও সরবরাহের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে রপ্তানিকারকরা কঠিন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের আশঙ্কার বিষয়ে দেশের সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।  

 

দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি: স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আবুল কালামের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের কষ্ট লাঘবে সরকার সবসময় সচেষ্ট আছে।

 

বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এতে ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আছে। তিনি বলেন, বিশ্ববাজারের কয়েকটি পণ্য যেমন জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেল, গমসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য, ভোগ্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামালের মূল্য বাড়ায় আমাদের দেশে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ অনুভূত হচ্ছে। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে শুরু হওয়া সংঘাতের ফলে সংকট ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে এ পরিস্থিতিতেও আমরা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও জনগণের ওপর এর প্রভাব প্রশমনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। টাকার বিনিময় হারের সাম্প্রতিক পতন অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আনার জন্য শিগগিরই ক্রলিং পেগ ভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় নীতি গ্রহণ করা হবে।

 

 নির্ধারিত করিডোরভিত্তিক এ ব্যবস্থা বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের অস্বাভাবিক উত্থান-পতন রোধ করবে বলে আশা করা যায়। ফলে এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক হবে। মূল্যস্ফীতির ওপর বাহ্যিক প্রভাব কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বিলাসদ্রব্য বা অপেক্ষাকৃত কম প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যে এলসি স্থাপন সহজীকরণ করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 

 

টিসিবি’র কার্যক্রম সম্প্রসারণ: সংসদে সম্পূরক প্রশ্নের সুযোগ নিয়ে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ড. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে টিসিবি’র কার্যক্রম সম্প্রসারণের প্রস্তাব করেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, টিসিবিতে যে লোকবল আছে সেটা দিয়ে আমরা মানুষের যে সেবা করে যাচ্ছি, সেটাই যথেষ্ট। আর সাধারণ মানুষের যাতে কষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায়, বিশেষ করে যারা সীমিত আয়ের মানুষ তাদের কষ্ট হচ্ছে। তবে, গ্রামে যারা নিজেরা উৎপাদন করতে পারেন বা করছেন তাদের খুব একটা কষ্ট নেই, হাহাকারও নেই। তারপরও আমাদের সবসময় প্রচেষ্টা থাকে দ্রব্যমূল্য যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে। এজন্য যে যে পণ্যের প্রয়োজন সেটা যথাযথভাবে দেশে উৎপাদনের পদক্ষেপ নিয়েছি। পাশাপাশি আমদানিও করে যাচ্ছি। সেটা যত টাকাই লাগুক না কেন, আমরা কিন্তু খরচ করে যাচ্ছি। যেটা আমাদের রিজার্ভেও চাপ পড়ছে। মানুষের কল্যাণটা হচ্ছে আমাদের সব থেকে বড় কথা। সেদিকে আমরা লক্ষ্য রাখছি।  

সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধে পদক্ষেপ: বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মুজিবুল হকের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ট্রাফিক পুলিশ দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে। তাদের ঈদ বা ঝড়বৃষ্টি, রোদ বলে কিছু নেই। তারা তাদের কর্তব্য পালন করে যান। কিন্তু মানুষের সচেতনতা না এলে কী করবেন। হেলপার যদি গাড়ি চালায় বা যার লাইসেন্স নেই, সে যে কখন কোন গাড়িতে বসে চালাতে শুরু করে এটা তো বুঝাও দুষ্কর। আর এভাবে গাড়ি চালাতে গিয়েই দুর্ঘটনা ঘটে। এরা নিজেও মরে, যাত্রীদেরও মারে। দেশে ব্যক্তিগত গাড়ি বেড়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। আমরাও গাড়ি কেনার সুযোগ দিয়েছি মানুষকে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও সুযোগ দিয়েছি। এখন আমাদের গাড়ির সংখ্যা এত বেশি কিন্তু সেই তুলনায় ড্রাইভারের সংখ্যা খুব কম। আমরা চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও নিচ্ছি। 

 

এখন শুধু হাতে কলমেই ট্রেনিং নয়, একেবারে কম্পিউটারাইজড। ডিজিটাল সিস্টেমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যাতে লাইসেন্স দেয়া হয় সেই পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। এই প্রশিক্ষণটা নেয়া... আর যাদের ভারী গাড়ি চালানোর কোনো লাইসেন্স নেই তারা যেন সেটা চালাতে না যান। এটা করতে গেলে তা হবে আত্মঘাতী। এই আত্মঘাতী ব্যবস্থা থেকে মানুষকে বিরত রাখতে হবে। এ ব্যাপারে সকলে সচেতন ও সোচ্চার হলে দুর্ঘটনা অনেকটা কমবে। তারপরও বলবো দুর্ঘটনা, দুর্ঘটনাই। এটা আমাদের দেশ বলে নয়, সারা বিশ্বে অন্য দেশে যান- কী পরিমাণ মানুষ দুর্ঘটনায় মারা যায়। এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা সুনির্দিষ্ট করে দুর্ঘটনা মুক্ত করার পদক্ষেপ নিয়েছি। 

 মুসলিম দেশগুলোর ঐক্য ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা কমাতে পারে: ওদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বের সব মুসলিম দেশ একসঙ্গে কাজ করলে, ফিলিস্তিনিদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবসহ মুসলিমদের জন্য আরও ভালো অবস্থানে পৌঁছানো সহজ হতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন আশকোনা হজক্যাম্পে ধর্ম মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘হজ কার্যক্রম ২০২৪’-এর উদ্বোধনকালে দেয়া প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

 ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ হুছামুদ্দিন চৌধুরী ও বাংলাদেশে সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসুফ ঈসা আল দুহাইলান বক্তৃতা করেন। হজ এজেন্সি এসোসিয়েশন বাংলাদেশ (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার বক্তৃতা করেন। দু’জন হজযাত্রী অনুষ্ঠানে নিজস্ব অভিব্যক্তিও ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে ২০২৪ সালের হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি অডিও ভিজ্যুয়াল পরিবেশনা প্রদর্শিত হয় এবং শেষে দেশ-জাতি ও হজযাত্রীদের সার্বিক মঙ্গল কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এ বছর মোট ৮৫ হাজার ২৫৭ বাংলাদেশি হজ পালন করতে পারবেন। তাদের মধ্যে ৪ হাজার ৫৬২ জন সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবং বাকি ৮০ হাজার ৬৯৫ জন ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনায় হজ পালন করবেন। এ বছর আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের নিয়ে হজ ফ্লাইট চালু হওয়ার কথা রয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রথম হজ ফ্লাইট বিজি-৩৩০১ বিমানটি ৪১৯ জন যাত্রী নিয়ে সকাল ৭টা ২০ মিনিটে সৌদি আরবের জেদ্দার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার এখানে একটাই কথা- সকলে এক হন এবং এ ধরনের অন্যায় অবিচার যেন আমাদের ওপর না হয়, সেজন্য সকলেই লক্ষ্য রাখবেন। আন্তর্জাতিক যে ফোরামে কথা বলেছেন সেখানেই ফিলিস্তিনিদের জন্য তার কণ্ঠ ‘সোচ্চার ছিল’- উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি প্রতিটি জায়গায় এর প্রতিবাদ করে যাচ্ছি। 

কারণ ফিলিস্তিনিরা আরব ভূখণ্ডে তাদের জায়গা তারা পাবে, এটা তাদের অধিকার। এই অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারে না। কাজেই সেই অধিকার তাদের দিতে হবে। ১৯৭৪ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে জাতির পিতার ভাষণেরও এখানে উদ্ধৃতি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। জাতির পিতা বলেন, আরব ভাইদের ওপর যে নিদারুণ অবিচার হয়েছে। অবশ্যই তার অবসান ঘটাতে হবে। অন্যায়ভাবে দখলকৃত আরব ভূমি অবশ্যই ছেড়ে দিতে হবে। জেরুজালেমের ওপর আমাদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, কাজেই জেরুজালেমে মুসলমানদের যে অধিকার, এটা প্রতিষ্ঠা করার কথাও জাতির পিতাই তার বক্তব্যে বলেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আপনারা দেখছেন ফিলিস্তিনে গণহত্যা চালানো হচ্ছে। সেখানে নারী ও ছোট ছোট শিশুদেরও রেহাই দেয়া হচ্ছে না। কাজেই তাদের জন্য, বাংলাদেশের জন্য ও সারাবিশ্বের মুসলিম উম্মাহর জন্য আপনারা (হজযাত্রী) দোয়া করবেন। তিনি হজযাত্রীদের কাছে দেশ ও জাতির জন্য দোয়া চেয়ে বলেন, তার সরকার হাজীদের জন্য যে সুযোগ- সুবিধা সংবলিত হজ ব্যবস্থাপনা করতে পেরেছে, সেটা ধরে রেখে যেন এটাকে আরও উন্নত করতে পারে- সে দোয়াটা আপনারা করবেন আর দেশের মানুষের জন্য দোয়া করবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যেন আমাদের মানুষের জন্য গোলা ভরা ধান দেন, পুকুর ভরা মাছ দেন, সুন্দর-উন্নত জীবন দেন, সেই দোয়া করবেন। এ সময় সরকার হজ ব্যবস্থাপনাকে আরও উন্নত করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর