[email protected] শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫
১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

‘শেখ হাসিনা অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত, প্রতারণা করেছেন’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৭ নভেম্বর ২০২৫ ৬:১৫ পিএম

ঢাকার বিশেষ জজ-৫ আদালত বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) পূর্বাচল

নতুন শহর প্রকল্পে সরকারি প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত তিনটি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য ২১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। রায়ে প্রতিটি মামলায় ৭ বছর করে কারাদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে। একই ঘটনায় তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে পৃথকভাবে ৫ বছর করে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। এ ছাড়া আরও ১৯ জন সরকারি কর্মকর্তা, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান ও সদস্যদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।

বিচারকের পর্যবেক্ষণ

বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, শেখ হাসিনা অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে সরকারি বিধি লঙ্ঘন করেছেন। তিনি বলেন, চারবারের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও সম্পদের প্রতি লোভ দেখা গেছে, যা সাধারণ মানুষের জন্য অস্বাভাবিক। বিচারক আরও উল্লেখ করেন, যদি শেখ হাসিনা এই প্লটটি না নিতেন, তবে হয়তো কোনো সৎ লোক সেটি পেত।

মামলা ও অভিযোগের পটভূমি

মামলা শুরু হয় ২০২২ সালের জুলাইয়ে, যখন একটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয় যে শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের জন্য পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের সরকারি প্লট বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। এরপর দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) তদন্ত শুরু করে এবং ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে মামলার অনুমতি মঞ্জুর করা হয়।

বিচারক বলেন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর নিয়ম অনুযায়ী কোনো প্লট বরাদ্দ দেওয়ার আগে প্রার্থীর আবেদন থাকা আবশ্যক, যা শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে হয়নি। তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের নির্দেশে এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরের মাধ্যমে নিয়ম অমান্য করে প্লট বরাদ্দ করা হয়।

হলফনামার অবৈধতা

শেখ হাসিনা রাজউকে যে হলফনামা দিয়েছেন, তা নোটারি পাবলিক বা প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে শপথ করা হয়নি, ফলে আইনগতভাবে অকার্যকর ছিল। তবু অবৈধ হলফনামার ভিত্তিতে প্লট বরাদ্দপত্র জারি করা হয়। পরে রাজউকের মাধ্যমে প্লটের মূল্য নির্ধারণ করা হয় এবং চূড়ান্ত লিজ দলিল কালীগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নিবন্ধিত করা হয়।

পরিবারের জন্য প্লট বরাদ্দ

শেখ হাসিনা তার ছেলে, মেয়ে এবং অন্যান্য পরিবারের সদস্যদের জন্যও প্লটের আবেদন করেছেন। বিচারকের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, এটি দেখায় যে সম্পদের প্রতি ব্যক্তিগত লোভ দেখা গেছে। এছাড়া রাজউক ও গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ও নিয়মভঙ্গ করেছে।

কার কত বছরের সাজা

শেখ হাসিনা: ৩ মামলায় ৭ বছর করে মোট ২১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ১ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ৬ মাস করে দেড় বছরের অতিরিক্ত কারাদণ্ড।

সজীব ওয়াজেদ জয়: এক মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড ও অনাদায়ী অতিরিক্ত সাজা।

সায়মা ওয়াজেদ পুতুল: এক মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ড।

অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা ও রাজউকের সদস্যদের সাজা ১ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে।


খালাস ও অসম্পূর্ণ প্রমাণ

দুদক মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। তাই তাকে কিছু ধারার অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে, যেমন দণ্ডবিধির ৪০৯, ১৬১ ও ১৬৩ ধারা।

প্রতিক্রিয়া

দুদকের প্রসিকিউটর জানান, তারা রায়ে সন্তুষ্ট নয় এবং প্রয়োজনে হাইকোর্টে আপিল করার বিষয়টি বিবেচনা করবে।

 

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর