[email protected] রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫
৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

আশুলিয়ায় মরদেহ পোড়ানোসহ সাত হত্যায় আজ ১৮তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০২৫ ৮:৪৩ এএম

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় গত বছরের ৫

আগস্ট আশুলিয়ায় ছয় জনকে গুলি করে হত্যা ও পরে মরদেহ পোড়ানোসহ সাতজনকে হত্যার অভিযোগে দায়ের হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের ১৮তম দিন আজ। মামলায় সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ মোট ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২–এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চে এ দিনের সাক্ষ্য উপস্থাপন হবে। প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন—অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।

আজ দুইজন সাক্ষীর জবানবন্দি শোনার কথা রয়েছে। প্রসিকিউশন জানিয়েছে, দ্রুতই রাজসাক্ষী হওয়া এসআই শেখ আবজালুল হক আদালতে সাক্ষ্য দেবেন।

গতকাল নির্ধারিত সাক্ষ্যগ্রহণ বিশেষ কারণবশত অনুষ্ঠিত হয়নি, যদিও আসামিদের আদালতে আনা হয়েছিল। একই কারণে ১২ নভেম্বরও প্রসিকিউশন সাক্ষী হাজির করতে পারেনি। সেই ধারাবাহিকতায় আজকের শুনানি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

মামলায় গ্রেপ্তার আট জন হলেন—ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, সাবেক সাভার সার্কেল এএসপি মো. শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, আবজাল এবং কনস্টেবল মুকুল। তবে সাবেক এমপি সাইফুলসহ আরও আটজন এখনও পলাতক।

এর আগে ৫ নভেম্বর ২২তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন প্রত্যক্ষদর্শী শাহরিয়ার হোসেন সজিব। তিনি জানান, তার সামনেই একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান এবং তার বন্ধু সাজ্জাদ হোসেন সজলকে পুলিশ আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে। পরে স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষ তার জিজ্ঞাসাবাদ সম্পন্ন করে।

৩০ অক্টোবর আদালতে সাক্ষ্য দেন গুলিবিদ্ধ ভুক্তভোগী সানি মৃধা। তিনি ২১তম সাক্ষী হিসেবে পুলিশের গুলিতে আহত হওয়ার বিবরণ এবং গত বছরের ৫ আগস্টের ভয়াবহ ঘটনার চিত্র তুলে ধরেন। ২৯ অক্টোবর জব্দ তালিকার সাক্ষী হিসেবে এসআই মো. আশরাফুল হাসান জানান, একই থানার ওসির নির্দেশে তিনি চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল রাইফেলের ছয় রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেন এবং তা থানায় জমা দেন।

১৫ সেপ্টেম্বর প্রথম দিনে সাক্ষ্য দেন শহীদ আস সাবুরের ভাই রেজওয়ানুল ইসলাম এবং শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের বাবা খলিলুর রহমান। এর আগের দিন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম মামলার সূচনা বক্তব্যে গত বছরের ৫ আগস্টের নৃশংস ঘটনার বর্ণনা দেন।

ট্রাইব্যুনাল-২ গত ২১ আগস্ট ১৬ জন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয়। ওইদিন উপস্থিত আট আসামির সাতজন নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন, তবে এসআই শেখ আবজালুল হক দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। পরে তার দোষ স্বীকারোক্তি রেকর্ড করা হয় এবং তাকে রাজসাক্ষী হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।

প্রসিকিউশন গত ২ জুলাই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। অভিযোগপত্রের সঙ্গে ৩১৩ পৃষ্ঠার নথি, ৬২ জন সাক্ষীর তালিকা, ১৬৮ পৃষ্ঠার আলামত ও দুটি পেনড্রাইভ যুক্ত করা হয়। পরে ট্রাইব্যুনাল ১৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে ছয় তরুণ নিহত হন। পরে তাদের লাশ পুলিশ ভ্যানে তুলে আগুনে পোড়ানো হয়। এ সময় একজন জীবিত থাকলেও তাকেও পেট্রোল ঢেলে জীবন্ত অবস্থায় হত্যা করা হয়। এই নৃশংস ঘটনার পর ১১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়।

 

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর