[email protected] বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

যে কারণে হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের কপি যাচ্ছে না দুই মন্ত্রণালয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০২৫ ১:০৪ পিএম

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান অসুস্থ—হাসিনা ও কামালের মৃত্যুদণ্ডের

রায়ের কপি আজ পাঠানো হচ্ছে না

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার অসুস্থ থাকায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডসংক্রান্ত রায়ের কপি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আজ আর পাঠানো যাচ্ছে না।

মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে ট্রাইব্যুনাল প্রশাসন এ তথ্য জানায়। সকালে জানানো হয়েছিল—রায়ের কপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ প্রধানের কার্যালয়সহ কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হবে। একইসঙ্গে কারাগারে থাকা দণ্ডিত সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের কাছেও কপি পাঠানোর কথা ছিল।

ট্রাইব্যুনাল প্রশাসন জানায়, চেয়ারম্যানের অসুস্থতার কারণে রায় সই বা প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। তাই সব সংশ্লিষ্ট দপ্তরে রায়ের নথি হস্তান্তর স্থগিত করা হয়েছে।

মামলার পটভূমি ও রায়প্রদান

গত সোমবার চব্বিশের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রাজসাক্ষী হিসেবে পুরো ঘটনার তথ্য আদালতে দেওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল–১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার। প্যানেলের অন্য দুই সদস্য ছিলেন—বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

ওই দিন দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে বিচারিক প্যানেল এজলাসে আসেন। ধন্যবাদ জ্ঞাপনের পর দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে রায়ের পাঠ শুরু হয়। তিন বিচারকের পাঠ মিলিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা দশ মিনিট ধরে ৪৫৩ পৃষ্ঠার সংক্ষিপ্ত রায় পড়া হয়।

রায়ের পর্যবেক্ষণ

রায়ে ট্রাইব্যুনাল উল্লেখ করে—গুরুতর আহত, অঙ্গহানি ও দৃষ্টিশক্তি হারানো অনেক সাক্ষী আদালতে এসে যে বেদনাদায়ক বাস্তবতার কথা বলেছেন, তা দেখে যে কারও মানসিক স্থিরতা নষ্ট হওয়ার মতো। তাই অপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় আনা ছাড়া ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

অভিযোগ–১: উসকানি, নির্দেশ এবং নিষ্ক্রিয়তা

প্রথম অভিযোগে বলা হয়—

১৪ জুলাই গণভবনের সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত ছাত্র–জনতাকে ‘রাজাকার’ বলে আখ্যায়ন।

সেদিন রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে ফোন করে কঠোর দমন-পীড়নের নির্দেশ।

এসব বক্তব্য ও নির্দেশনা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেয়।

রংপুরে শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার ঘটনাও এর ধারাবাহিকতা।


এই অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্ররোচনা, নির্দেশ প্রদান ও প্রতিরোধে ব্যর্থতার দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

অভিযোগ–২: মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ ও গণহত্যা

দ্বিতীয় অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল উল্লেখ করে—

১৮ জুলাই ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে ফোনালাপে আন্দোলনকারী দমনে হেলিকপ্টার ও মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশনা দেন তিনি।

ড্রোনের মাধ্যমে ছাত্রদের অবস্থান শনাক্ত করার নির্দেশও দেন।

৫ আগস্ট রাজধানীর চানখারপুলে ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং একই দিন আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে ফেলার ঘটনাকে এই নির্দেশের সরাসরি ফল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।


এই অভিযোগে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল উভয়ের একমাত্র শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড নির্ধারিত হয়।

রাজসাক্ষী মামুনকে শাস্তি হ্রাস

ট্রাইব্যুনাল জানায়—চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন সর্বোচ্চ শাস্তিযোগ্য হলেও তিনি আদালতে সত্য স্বীকার করে তদন্ত ও বিচারকাজে সহায়তা করায় নমনীয়তা প্রদর্শন করা হয়েছে। তাই তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

অতিরিক্ত অভিযোগগুলো

রায়ে আরও উল্লেখ করা হয়—

শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশে সারা দেশে ১,৪০০ আন্দোলনকারী প্রাণ হারায় এবং কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়।

আন্দোলন দমনে হেলিকপ্টার, ড্রোন, মারণাস্ত্র ব্যবহারও তার অনুমোদিত পরিকল্পনার অংশ ছিল।


এই ধারাবাহিক ঘটনার প্রেক্ষিতেই ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্তে পৌঁছে যে অপরাধ আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধের পর্যায়ে পড়ে এবং সর্বোচ্চ শাস্তি প্রযোজ্য।

 

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর