জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসেন হত্যা মামলায় তার ছাত্রী বার্জিস শাবনাম বর্ষা আদালতে স্বীকার করেছেন, প্রেমিক মাহির রহমানকেই তিনি শিক্ষককে হত্যা করতে অনুরোধ করেছিলেন।
জবানবন্দিতে বর্ষা বলেন, “স্যারকে তুমি মেরে ফেল, আমি আর সহ্য করতে পারছি না।”
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে তিন আসামি—বর্ষা, তার প্রেমিক মাহির রহমান এবং মাহিরের বন্ধু ফারদীন আহম্মেদ আয়লান স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
এর আগে বিকেলে তাদের আদালতে হাজির করে জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বংশাল থানার এসআই মো. আশরাফ হোসেন। আদালত তিনজনের জবানবন্দি রেকর্ড করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
জবানবন্দিতে বলা হয়, দেড় বছর আগে বর্ষা ও মাহিরের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অন্যদিকে প্রায় এক বছর ধরে বর্ষাকে টিউশন করাতেন জবি ছাত্র জোবায়েদ। সেই সূত্রে শিক্ষকের সঙ্গে বর্ষার ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়, যা ধীরে ধীরে প্রেমের সম্পর্কে রূপ নেয়।
বিষয়টি জানতে পেরে মাহির ক্ষুব্ধ হন। ঘটনার এক মাস আগে মাহির জানতে পারেন, বর্ষার সঙ্গে জোবায়েদের সম্পর্ক রয়েছে। তখন বর্ষা মাহিরকে বলেন, “স্যারকে তুমি মেরে ফেল, আমি আর সহ্য করতে পারছি না।” এরপর তারা দুজন মিলে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
মাহির ও বর্ষা জোবায়েদ কখন পড়াতে আসে, কখন বাসা থেকে যায়—এসব তথ্য নিয়মিত শেয়ার করতেন বর্ষা। পরিকল্পনা অনুযায়ী মাহির তার বন্ধু আয়লানকে সঙ্গে নিয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বউবাজার এলাকা থেকে ৫০০ টাকায় একটি সুইচ গিয়ার চাকু কেনেন।
রোববার (১৯ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জোবায়েদ বংশালের নুর বক্স লেনের ১৫ নম্বর রৌশান ভিলায় টিউশন করাতে যান। সিঁড়ির নিচে পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে ছিলেন মাহির ও তার বন্ধু আয়লান।
জোবায়েদ নিচে পৌঁছালে মাহির তাকে জিজ্ঞেস করেন, “আপনি বর্ষার সঙ্গে সম্পর্ক করেন কেন?” এরপর কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে মাহির ব্যাগ থেকে চাকু বের করে জোবায়েদের গলার ডান পাশে আঘাত করেন। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
ঘটনার সময় বর্ষা ভবনের তৃতীয় তলায় অবস্থান করছিলেন। পরে ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজে আসামিদের উপস্থিতির প্রমাণও পাওয়া যায়।
রোববার রাত ১০টার দিকে বর্ষাকে তার বাসা থেকে আটক করে পুলিশ। সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের ভাংনা এলাকা থেকে মাহিরকে এবং রাত ১০টার দিকে শান্তিনগর এলাকা থেকে ফারদীনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মঙ্গলবার তিন আসামি পৃথক আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই তানভীর মোর্শেদ চৌধুরী জানান, আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বাদী নিহত জোবায়েদের ভাই এনায়েত হোসেন জানান, প্রতিদিনের মতো রোববার বিকেলে জোবায়েদ টিউশন করতে বের হন। পরে সন্ধ্যায় বর্ষা জোবায়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ভাইকে মেসেঞ্জারে বার্তা পাঠায়—“স্যার খুন হয়ে গেছে।”
খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সিঁড়ি ও দেয়ালে রক্তের দাগ এবং তৃতীয় তলার সিঁড়িতে জোবায়েদের রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পান।
দুই দিন পর মঙ্গলবার এনায়েত হোসেন বংশাল থানায় মামলা দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জোবায়েদকে হত্যা করেছে।
এসআর
মন্তব্য করুন: