দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। পারিবারিক, সামাজিক কিংবা কর্মক্ষেত্র—কোথাও নিরাপদ নন নারীরা।
প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন নারীরা। সরকার নানা উদ্যোগ ও কড়া বার্তা দিলেও এসব অপরাধ থামছে না।
সম্প্রতি কুমিল্লার মুরাদনগরে গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনায় দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ফজর আলী নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি ঘরে ঢুকে ওই নারীকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ। পরে তার বিবস্ত্র অবস্থায় মারধরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে এবং পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এর আগে গত মার্চে মাগুরায় আট বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায়ও দেশব্যাপী প্রতিবাদ হয়। এমন প্রেক্ষাপটে ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার জন্য দেশের প্রচলিত আইনে কী শাস্তি রয়েছে, তা জানানো জরুরি।
ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা ও গণধর্ষণের শাস্তি
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ অনুযায়ী:
- ধারা ৯(১): কোনো পুরুষ যদি কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তবে তার মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড হতে পারে।
- ধারা ৯(২): ধর্ষণের ফলে যদি ভিকটিমের মৃত্যু হয়, তবে দোষী ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, এবং ন্যূনতম এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
- ধারা ৯(৩): গণধর্ষণের ক্ষেত্রে একই ধরনের শাস্তি প্রযোজ্য—মৃত্যুদণ্ড/যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।
ধর্ষণের পর হত্যা বা আহত করার চেষ্টা
- ধারা ৯(৪)(ক): যদি ধর্ষণের পর হত্যা বা গুরুতর শারীরিক আঘাতের চেষ্টা করা হয়, তবে দোষীর মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড হতে পারে।
পুলিশ হেফাজতে ধর্ষণের শাস্তি
- কোনো নারী যদি পুলিশ হেফাজতে ধর্ষণের শিকার হন, তবে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে এই আইনে।
নারীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার সাজা
- ধারা ৯(ক): সম্ভ্রমহানির আশঙ্কা বা নির্যাতনের কারণে কোনো নারী আত্মহত্যা করলে, দায়ী ব্যক্তি ৫ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ডে এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
নারী ও শিশু অপহরণের শাস্তি
- ধারা ৭: নারী বা শিশুকে অপহরণের জন্য ১৪ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড হতে পারে। তবে যদি অপহরণের উদ্দেশ্য হয় ধর্ষণ বা নির্যাতন, তাহলে শাস্তি আরও গুরুতর হয়।
দেশে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধে শুধু আইন প্রয়োগ নয়, প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা এবং দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা।
মন্তব্য করুন: