[email protected] সোমবার, ১৯ মে ২০২৫
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চবির সমাবর্তনে ২,৪০০ পুলিশ সদস্যের কেউ পাননি এক প্যাকেট খাবারও!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬ মে ২০২৫ ১:৪৮ পিএম

সংগৃহীত ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পঞ্চম সমাবর্তন নির্বিঘ্ন করতে নিয়োজিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের প্রায় ২,৪০০ সদস্য।

নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দিনরাত কাজ করলেও তাদের জন্য ছিল না খাবার বা পানির ন্যূনতম ব্যবস্থা। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্যালাইন বা এক বোতল পানিও দেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “যাদের পরিশ্রমে এত বড় অনুষ্ঠান নির্বিঘ্ন হয়েছে, তাদের খোঁজও নেয়নি কেউ। একজন সদস্যকেও একবেলা খাবার দেওয়া হয়নি।”

পুলিশ সদস্যদের অভিযোগ, শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সহযোগিতায় আগ্রহী ছিল না। শেষ মুহূর্তে নিরাপত্তায় পুলিশের সাহায্য নেওয়া হলেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার অভাবে তারা পড়েন চরম দুর্ভোগে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমাবর্তন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী বলেন, “শিক্ষার্থীদের পানির সংকটের বিষয়ে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। পুলিশের খাবারসংক্রান্ত বিষয়টি আমার জানা নেই, ওপেনিং ডে-তে তা পর্যালোচনা করা হবে।”

প্রায় ২৩ হাজার গ্র্যাজুয়েটের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এই সমাবর্তন একদিকে ছিল গর্বের, অন্যদিকে ছিল দুর্ভোগের চিত্রে আচ্ছন্ন। বিপুল বাজেট ও বিশাল আয়োজন সত্ত্বেও ছিল শৃঙ্খলার অভাব, পরিবহন সংকট, পর্যাপ্ত পানির ঘাটতি, প্যান্ডেলের তীব্র গরম, ভিআইপি প্রাধান্য এবং সাউন্ড সিস্টেমের ত্রুটি।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, অনুষ্ঠান শেষে তাদের অনেকে পরিবহন না পেয়ে ট্রাক, এমনকি অ্যাম্বুলেন্সে করে শহরে ফিরেছেন। কেউ কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও বাস বা সিএনজির দেখা পাননি।

সমাবর্তনে অংশ নেওয়া ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী এনামুল হক তাসনীম বলেন, “ভয়াবহ পরিবহন সংকটে হাজারো শিক্ষার্থী দুর্ভোগে পড়েছে। পানির অভাবে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মমতাহীনা খানম ফেসবুকে লিখেছেন, “বসার ব্যবস্থা ছিল না, ফ্যান ছিল না, সাউন্ডও শোনা যায়নি। তাহলে এতটা পথ হেঁটে গিয়ে প্যান্ডেলে বসে থাকার মানেটা কী?”

একজন সাবেক শিক্ষার্থী শিপন রায় লেখেন, “শাটল ট্রেনে ধাক্কায় আমার ১৬ মাস বয়সী সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়ে। তারপরও কোনো পরিবহন পাইনি, শেষমেশ অ্যাম্বুলেন্সে ফিরেছি।”

তবে সব দুর্ভোগের মাঝেও অনেক শিক্ষার্থীর কাছে দিনটি ছিল এক আবেগঘন স্মৃতি। শিক্ষার্থী সামিয়া আক্তার বলেন, “পিতা-মাতার সামনে গাউন ও টুপি পরে দাঁড়ানো মুহূর্তটি জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জনের মতো লেগেছে।”

উল্লেখ্য, পঞ্চম সমাবর্তনে ২০১১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২২,৫৮৬ জন শিক্ষার্থীকে সনদ প্রদান করা হয়, যার মধ্যে ৪২ জন পিএইচডি ও ৩৩ জন এমফিল ডিগ্রিপ্রাপ্ত। ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে আয়োজিত এই সমাবর্তনের জন্য ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় প্যান্ডেল। 

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর