র্যাবকে পরিচ্ছন্ন বাহিনী হিসেবে নতুনভাবে আত্মপ্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
প্রায় ২০ বছর ধরে পুলিশ অধ্যাদেশের অধীনে পরিচালিত এ বাহিনীর নাম, লোগো ও পোশাক পরিবর্তনের পরিকল্পনা চলছে, পাশাপাশি কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে প্রণীত হচ্ছে নতুন আইন।
র্যাবের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বাহিনীর কর্মকাণ্ডে আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে।
মানবাধিকারকর্মীরা র্যাবের কার্যক্রমের ব্যাপারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
কেউ বলছেন, বাহিনীটিকে বিলুপ্ত করা উচিত, আবার কেউ মনে করেন সংস্কারের মাধ্যমে আইন কাঠামোর আওতায় রেখে পরিচালনা করাই যুক্তিযুক্ত হবে।
২০০৪ সালে বিএনপি সরকার সন্ত্রাসবাদ ও সংঘবদ্ধ অপরাধ দমনের লক্ষ্যে র্যাব গঠন করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে, বিশেষত আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে গত ১৫ বছরে বাহিনীর কর্মকাণ্ড নিয়ে দেশে ও আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনা বেড়ে যায়।
গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগে র্যাব অভিযুক্ত হয়। এই প্রেক্ষিতে ২০২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
সম্প্রতি গঠিত গুমসংক্রান্ত কমিশনের কাছে ২০০৯-২০২৪ সময়কালে গুমের ১৬০০ অভিযোগ জমা পড়ে, যার মধ্যে ৪০০টি তদন্ত করা হলে ১৭২টি গুমে র্যাবের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৫-২০২৩ সময়কালে ৪৬৭টি কথিত বন্দুকযুদ্ধে র্যাবের সরাসরি অংশগ্রহণ ছিল।
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, "র্যাবের সংস্কার প্রয়োজন নেই, এটি বিলুপ্ত করা উচিত।" মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটনও বাহিনীটি বিলুপ্তির পক্ষে মত দেন।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, আইনি কাঠামোর অধীনে এনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে র্যাব পরিচালনা করা যেতে পারে।
র্যাবের লিগাল মিডিয়া উইংয়ের কমান্ডার লে. কর্নেল মুনিম ফেরদৌস জানিয়েছেন, বাহিনীর নতুন নাম, পোশাক এবং নিয়ম-কানুন প্রবর্তন ও সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নতুন আইনের খসড়ায় বাহিনীর প্রশাসনিক ও অপারেশনাল কার্যক্রম, নিয়োগ, পদায়ন এবং শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের বিধানসহ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ও অপরাধ তদন্তের ক্ষমতা সংযোজন করা হবে।
এতদিন র্যাব পুলিশ অধ্যাদেশের অধীনে পরিচালিত হলেও নতুন আইন প্রণয়ন হলে এটি আরও স্বচ্ছ ও আইনসঙ্গতভাবে পরিচালিত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।
এসআর
মন্তব্য করুন: