যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ আদালত জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নিয়ে বিতর্কিত প্রশ্নে
আনুষ্ঠানিক শুনানি গ্রহণ করতে সম্মতি জানিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে নির্ধারিত হবে—আমেরিকার মাটিতে জন্ম নেওয়া শিশুদের সবাই কি পূর্বের মতো স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিক হিসেবে গণ্য হবে, নাকি এই অধিকার সংকুচিত করা যেতে পারে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনেই একটি নির্বাহী আদেশে ঘোষণা করেছিলেন যে, যেসব শিশুর বাবা বা মা যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বা অস্থায়ী ভিসায় অবস্থান করছেন, তাদের জন্মগত নাগরিকত্ব পাওয়া বন্ধ হবে। কিন্তু একাধিক ফেডারেল কোর্ট ওই আদেশকে সংবিধানবিরোধী বলে স্থগিত করে দেয়। আপিল পর্যায়ে আংশিকভাবে স্থগিতাদেশ বহাল থাকায় বিষয়টি শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছে।
কবে শুনানি হবে তা এখনো নির্ধারিত হয়নি, তবে সিদ্ধান্ত আসতে কয়েক মাস লাগতে পারে। আইনি বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রায় শুধু ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির ওপর নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রে “নাগরিক” বলতে কী বোঝায়—এই মৌলিক সংজ্ঞার ওপরও বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী ১৮৬৮ সালে গৃহীত হয়, যা মার্কিন মাটিতে জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তিকে নাগরিকত্ব প্রদানকে সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। দাসপ্রথা বিলোপের পর মুক্ত মানুষদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করাই এর মূল উদ্দেশ্য ছিল। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৩০টি দেশ এমন “জন্মগত নাগরিকত্ব” নীতি অনুসরণ করে।
মানবাধিকার সংগঠন ACLU-র আইন পরিচালক সেসিলিয়া ওয়াং দাবি করেছেন—এ বিধান কোনো প্রেসিডেন্ট পরিবর্তন করতে পারেন না; এটি সংবিধানের স্থায়ী অঙ্গীকার। তিনি বলেন, দেড়শ বছরের আইনি প্রথা ও সামাজিক বাস্তবতা এ নীতিকে সুস্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের আইনজীবীরা যুক্তি দিচ্ছেন যে, সংশোধনীটি বৈধভাবে দেশে থাকা ব্যক্তিদের সন্তানদের কথা বিবেচনায় রেখে প্রণীত হয়েছিল, এবং “মাটিতে জন্ম মানেই নাগরিকত্ব”—এ ধারণাকে তারা বিপর্যয়কর পরিণতির শঙ্কা হিসেবে দেখছেন।
বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু জন্মায় যাদের বাবা-মা অনুমোদনহীন অভিবাসী। পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল প্রায় ১২ লাখ। মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষণ বলছে—মাটিতে জন্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব বিলোপ করা হলে পরবর্তী কয়েক দশকে দেশে অননুমোদিত অভিবাসীর সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বাড়তে পারে।
এখন সবার দৃষ্টি সুপ্রিম কোর্টের দিকে, যে সিদ্ধান্তটি ভবিষ্যতে মার্কিন নাগরিকত্ব নীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে উঠতে পারে।
এসআর
মন্তব্য করুন: