[email protected] শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি ২০২৫
২৬ পৌষ ১৪৩১

হুন্ডিতে বিপুল ডলার নিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী নেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০২৪ ৩:২৯ এএম

ফাইল ছবি

বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাড়লে দাম কমে।

কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়লেও সেই হারে দাম কমেনি। অন্যদিকে প্রত্যাশিত বিনিয়োগ কমায় ব্যাপক হারে শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে। অথচ এখানেই ডলারের প্রয়োনীয়তা সবচেয়ে বেশি।

বর্তমানে দেশে প্রতি মাসে দুই বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আসছে। এর পরও ১২০ টাকার নিচে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। 

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই অতিরিক্ত ডলার হুন্ডির মাধ্যমে আবারও বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।

সরকার পতনের পর থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা যতটা সম্ভব ডলার সঙ্গে নিয়ে বর্ডার পার হয়ে অন্য দেশে চলে গেছেন, অনেকে যাওয়ার চেষ্টায় আছেন।

আবার যাঁরা পালিয়ে বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন, তাঁরা হুন্ডির মাধ্যমে দেশ থেকে ডলার নিচ্ছেন। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বর্তমানে প্রতি মাসে আমদানির জন্য ব্যয় হচ্ছে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলার। সেখানে রপ্তানি আয় তিন বিলিয়ন ডলার। বাকি দুই বিলিয়ন ডলারের চাহিদা পূরণ করছে রেমিট্যান্স।

কোনো কোনো মাসে আড়াই বিলিয়ন ডলারও আসছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ডলারের দাম কেন ১২০ টাকার নিচে নামছে না? সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, ব্যাংকে বর্তমানে এলসির চাহিদা কম, কমেছে বিদেশে ভ্রমণ, চিকিত্সা নিতে যাওয়া মানুষের সংখ্যাও কমেছে।

আবার আগামী জানুয়ারি মাসের আগে পড়ালেখাকেন্দ্রিক বিদেশে ডলার পেমেন্টের চাপও তৈরি হবে না। এ আবস্থায় রেমিট্যান্সের মাধ্যমে যে ডলার দেশে আসছে তা আবার হুন্ডি হয়ে বিদেশে পাচার হচ্ছে।

দেশের সম্পদ রক্ষা করতে এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

আওয়ামী লীগের অর্ধশত মন্ত্রী-এমপি বিপুল অর্থ-সম্পদ বিদেশে পাচার করেছেন। গত ১৫ বছরে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে যে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তাঁরা, এর বেশির ভাগই বিদেশে পাচার করেছেন।

এই তথ্য বের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধান, আমলে নেওয়া অভিযোগ এবং কমিশনের গোয়েন্দা রিপোর্ট থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যানশিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) তথ্যানুসারে, গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দেশ থেকে অন্তত ১৪ হাজার ৯২০ কোটি বা ১৪৯.২০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে।

বাংলাদেশি মুদ্রায় পাচার করা টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ১৭ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলারে ১১৮ টাকা ধরে)। এ হিসাবে গড়ে প্রতিবছর পাচার হয়েছে অন্তত এক লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা।

এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘টাকা পাচারের অন্যতম কারণ হলো রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতা।

আবার রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে পাচার করা সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনা এত দিন সম্ভব হয়নি। এর সঙ্গে দুদকসহ অন্য সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতাও দায়ী। তবে পাচারের টাকা ফেরানোর এখনই উপযুক্ত সময়।’

এদিকে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর যুক্তরাজ্যে ৭২টি সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব সম্পদের বেশির ভাগ তিনি গড়েছেন হুন্ডি পাচারের মাধ্যমে।

বিষয়টি তদন্তের জন্য ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির (এনসিএ) কাছে চিঠি লিখেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি আফসানা বেগম।

পূর্ব লন্ডনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসের পপলার অ্যান্ড লাইম হাউস আসন থেকে নির্বাচিত আফসানা বেগম জানান, শুধু যুক্তরাজ্য নয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিভিন্ন দেশে যেমন—যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায়ও অনেক সম্পদ রয়েছে।

 

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর