ভারতে দুই দিনের সফরে এসে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির
পুতিন জানিয়েছেন, তাঁর দেশ ভারতকে দীর্ঘমেয়াদে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহে প্রস্তুত। একইসাথে তিনি বলেন, ভারত যে সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে, তাতে মস্কো সরাসরি প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে।
দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে অনুষ্ঠিত ২৩তম ভারত–রাশিয়া বার্ষিক শীর্ষ বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে একাধিক সমঝোতা সই হয়। এসব চুক্তির বড় অংশই বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে তৈরি। এর মধ্যে জাহাজ নির্মাণ, আর্কটিক অঞ্চলে কাজের জন্য ভারতীয় নাবিকদের প্রশিক্ষণ, নৌ-রুট উন্নয়ন এবং বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্পে সহযোগিতার বিষয় রয়েছে।
ইউক্রেন প্রসঙ্গে মোদির মন্তব্য
বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে মোদি জানান, রাশিয়ার সঙ্গে তাঁর আলোচনায় অর্থনৈতিক সহযোগিতাই সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে। ২০৩০ সাল পর্যন্ত দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক রূপরেখা চূড়ান্ত হয়েছে, পাশাপাশি রাশিয়ায় আরও দুটি ভারতীয় দূতাবাস খোলার উদ্যোগও এগিয়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে তিনি বলেন, ভারত শুরু থেকেই শান্তির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের প্রচেষ্টায় যুক্ত রয়েছে। তাঁর দাবি, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বন্ধুর মতোই ভাগ করে নেন এবং উভয় দেশের মধ্যে বিশ্বাসই সম্পর্ককে শক্তিশালী করেছে। মোদির ভাষায়, ভারত নিরপেক্ষ নয়—ভারতের পক্ষ শান্তি।
পুতিনের বক্তব্য
পুতিন জানান, দুই দেশের সম্পর্ক অর্থনীতি, বাণিজ্য ও জ্বালানিসহ বহু খাতে আরও শক্তিশালী হচ্ছে। রাশিয়া ও ভারতের বাণিজ্যে এখন রুবল ও ভারতীয় রুপির ব্যবহারে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রাশিয়া ভারতকে অব্যাহতভাবে জ্বালানি সরবরাহ করতে প্রস্তুত—যুক্তরাষ্ট্রের চাপ থাকা সত্ত্বেও দুই দেশের মধ্যে শক্তি-বাণিজ্য চালু থাকবে। তামিলনাডুর কুদানকুলামে ভারতের যে বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে, তার ছয়টির মধ্যে দুই ইউনিট ইতোমধ্যেই গ্রিডে যুক্ত হয়েছে, বাকি চারটি নির্মাণাধীন। পুতিন জানান, এই প্রকল্প ভারতের কম খরচে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি নিশ্চিত করতে বড় ভূমিকা রাখবে।
এছাড়া ছোট মডিউলার রিয়্যাক্টর, ভাসমান পারমাণবিক কেন্দ্র ও চিকিৎসা–কৃষি খাতে পারমাণবিক প্রযুক্তি নিয়েও দুই দেশ ভবিষ্যতে কাজ করবে বলে জানান তিনি।
সফরের দিনের কার্যক্রম
দেশটিতে পৌঁছানোর পর পুতিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানান ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, যেখানে তিন বাহিনীর গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। পরে তিনি রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
দুপুরে মোদির সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক, তারপর সমঝোতা সই ও সংবাদ সম্মেলন—এসব কার্যক্রম শেষে পুতিন ভারত–রাশিয়া বিজনেস ফোরামে অংশ নেন। সন্ধ্যায় তিনি রাশিয়া টুডে’র দিল্লি ব্যুরো উদ্বোধন করেন এবং রাতে রাষ্ট্রপতি ভবনে আয়োজিত নৈশভোজে উপস্থিত থাকেন।
সবশেষে ভারতীয় সময় রাত ৯টায় তিনি দেশে ফিরে যান।
এসআর
মন্তব্য করুন: