ফিলিস্তিনের দীর্ঘ অবরোধ আর যুদ্ধের মধ্যে গাজা উপত্যকায়
প্রতিদিনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৭০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে—যার একটি বড় অংশই শিশু ও নারী। বহু শিশুর মাথার উপর থেকে এক নিমিষেই ভেঙে পড়েছে পুরো পরিবার; বাবা-মা, ভাইবোন—কেউ আর নেই তাদের পাশে। অজস্র শিশু এতিম হয়ে গেছে এমন বয়সে, যখন ‘মৃত্যু’ শব্দটির অর্থও তারা ভালোভাবে বোঝে না।
এই ভয়াবহ বাস্তবতার অংশবিশেষ উঠে এসেছে আলজাজিরার সম্প্রতি প্রকাশিত এক ভিডিওতে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, কয়েকজন গাজা-নিবাসী শিশুদের সঙ্গে কথা বলছেন এক ব্যক্তি; তাদের পারিবারিক অবস্থা, কে কে বেঁচে আছে—এ সব জানতে চাইছেন তিনি।
এক ছেলের শান্ত কণ্ঠে বেরিয়ে আসে দুঃখের অনুবাদ—
“আমার বাবা-মা দুজনই মারা গেছে।”
পাশে থাকা আরেক শিশুকে দেখিয়ে সে বলে—
“ওর বাবাও আর নেই।”
প্রশ্নকারী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন, “তোমার বাবাও মারা গেছে?”
ছেলেটি মাথা নিচু করে আবারও উত্তর দেয়—হ্যাঁ।
তাদের পাশের এক মেয়ে শিশুর দিকে ইশারা করে আরেকজন বলে ওঠে,
“ওর মা মারা গেছে।”
প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয়—তোমার বাবা কিভাবে মারা গেল?
মেয়েটির উত্তর, “নাবলুসে, আমার বাবাকে তিনবার গুলি করা হয়েছিল।”
ছোট সেই ছেলেটি নিজের বুকের দিকে দেখিয়ে বলে—
“আমার বাবাকে এখানে গুলি করা হয়েছিল।”
আরেকটি শিশু জানায়, তার বাবা পরিবারের জন্য আটা কিনতে বেরিয়েছিলেন—
“আটার বস্তা আনতে গিয়েছিল যেন আমরা খেতে পারি। কিন্তু আর ফিরে আসেনি।”
পরিবারের নাম জানতে চাইলে এক শিশু বলে, তারা ‘ওদা’ পরিবারের সদস্য। বর্তমানে কোথায় থাকছে জানতে চাইলে জানায়—‘জেইতুনে।’
আরেক মেয়ে জানায়, তার বাবার নাম ছিল ফাদি। সে প্রতিদিনের জীবিকার জন্য লাকড়ি সংগ্রহ করতে নাবলুসে গিয়েছিলেন; সেগুলো বিক্রি করে পরিবারকে খাবার জোগানোই ছিল তার উদ্দেশ্য। কিন্তু ফিরে এসেছিলেন নিথর দেহ হয়ে।
এইসব বর্ণনায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে—গাজার শিশুরা যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে এমন মানসিক আঘাতের মধ্যে বেড়ে উঠছে, যা তাদের পুরো শৈশবকে চিরতরে বদলে দিচ্ছে। যাদের ঠোঁটে থাকার কথা ছিল খেলাধুলার গল্প, সেইসব ছোট্ট মুখেই এখন বহন করছে প্রিয় মানুষ হারানোর বিবরণ।
এসআর
মন্তব্য করুন: