[email protected] মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫
১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহত ১ লাখ মানুষ, বলছে জার্মান গবেষণা

প্রতিদিনের বাংলা ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৫ নভেম্বর ২০২৫ ৯:৩৫ এএম

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের দুই বছরের

ধারাবাহিক হামলায় বাস্তবে কত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, তা এখন পর্যন্ত ধারণার চেয়েও অনেক বেশি হতে পারে— এমন তথ্য উঠে এসেছে জার্মান গবেষকদের নতুন এক বিশ্লেষণে। ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ডেমোগ্রাফিক রিসার্চ পরিচালিত এই গবেষণা জানাচ্ছে, সংঘাতের প্রথম ২৪ মাসে গাজায় অন্তত ১ লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

জার্মান সাপ্তাহিক পত্রিকা জাইট–এ প্রকাশিত প্রতিবেদনের বরাতে সংবাদমাধ্যম আনাদোলু জানিয়েছে, গবেষণা দলের হিসাব অনুযায়ী নিহতের সংখ্যা ৯৯ হাজার ৯৯৭ থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার ৯১৫— অর্থাৎ গড় হিসেবে প্রায় ১ লাখ ১২ হাজার মানুষ। গবেষণা দলের সহ–নেতা ইরিনা চেন বলেন, সম্পূর্ণ নির্ভুল সংখ্যা জানা কখনোই সম্ভব নয়, তবে যাচাইযোগ্য তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সবচেয়ে বাস্তবসম্মত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

গবেষণায় ব্যবহৃত তথ্য এসেছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান, একটি স্বাধীন পরিবারভিত্তিক জরিপ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত মৃত্যুসংবাদের সমন্বয় থেকে। এতদিন পর্যন্ত সরকারি হিসেবে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল— যুদ্ধের প্রথম দুই বছরে ৬৭ হাজার ১৭৩ জন নিহত হয়েছেন। জাইট–এ বলা হয়, এই সরকারি হিসাবকে ভুল প্রমাণের মতো কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি; বরং গবেষণাগুলোতে দেখা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সাধারণত রক্ষণশীলভাবে তথ্য প্রকাশ করে থাকে। এজন্য অনেক অপ্রকাশিত মৃত্যু সরকারি হিসাব থেকে বাদ পড়ে থাকতে পারে।

যুদ্ধের কারণে হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় অনেক মৃত্যু আনুষ্ঠানিকভাবে নথিভুক্ত হয়নি। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে মারা যাওয়া অসংখ্য মানুষও এই তালিকায় ধরা পড়ে না। তাই গবেষকরা বয়স, লিঙ্গ ও মৃত্যুহারের বিস্তারিত বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি বিস্তৃত চিত্র তুলে ধরেছেন।

তাদের হিসাব অনুযায়ী নিহতদের প্রায় ২৭ শতাংশ ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু, আর ২৪ শতাংশ নারী। বয়সভেদে দেখা যায়, ৬০ বছরের ওপর বয়সী মানুষের মৃত্যুর অনেক ঘটনাই সরকারি নথিতে জায়গা পায়নি।

গবেষণায় যুদ্ধের প্রভাবে গাজার জীবনযাত্রার নতুন সূচকও প্রকাশ পেয়েছে। সংঘাতের আগে নারীদের গড় আয়ু ছিল প্রায় ৭৭ বছর এবং পুরুষদের ৭৪ বছর। কিন্তু ২০২৪ সালের অনুমান অনুযায়ী এই সংখ্যা নারীদের ক্ষেত্রে নেমে এসেছে ৪৬ বছরে এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে ৩৬ বছরে। অর্থাৎ যুদ্ধ যদি এমনই চলতে থাকে, ভবিষ্যতে গাজার মানুষের গড় আয়ু এই মাত্রায় সীমাবদ্ধ হয়ে যেতে পারে।

এই পরিসংখ্যান ইঙ্গিত দিচ্ছে— দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ গাজার সাধারণ মানুষের জীবনকে কীভাবে ভয়াবহভাবে সংকুচিত করে ফেলেছে।


l

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর