[email protected] রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫
৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

ভূমিকম্পের পর সাগরের বুক চিড়ে যেভাবে জেগে উঠেছিল সেন্টমার্টিন দ্বীপ

প্রতিদিনের বাংলা ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১ নভেম্বর ২০২৫ ৪:০১ পিএম

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন আজ পর্যটকদের কাছে

শান্ত সমুদ্র, কোমল বালুকাবেলা আর নীল আকাশের অপূর্ব মিশেল। কিন্তু এই দ্বীপের জন্মগাথা লুকিয়ে আছে গভীর সমুদ্রতল এবং ভূ-প্লেটের ভয়াল সংঘর্ষে। গবেষণায় পাওয়া তথ্য বলছে—১৭৬২ সালের ২ এপ্রিল ঘটে যাওয়া এক প্রবল ভূমিকম্পের মাধ্যমেই রাতারাতি সমুদ্রপৃষ্ঠ ভেদ করে ভূমিরূপ নেয় বর্তমান সেন্টমার্টিন।

বিজ্ঞানবিষয়ক নানা গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভারত ও মিয়ানমার প্লেটের সীমান্তে অবস্থান করা একটি শক্তিশালী সক্রিয় ভূমিকম্প অঞ্চলেই ওই বছরের ভয়াবহ কম্পন সৃষ্টি হয়েছিল। ঐতিহাসিক দলিল এবং বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ অনুসারে, কম্পনের মাত্রা রিখটার স্কেলে ছিল প্রায় ৮.৫ বা তারও বেশি—যা সেই সময়কার সমগ্র চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলে প্রচণ্ড ধাক্কা সৃষ্টি করেছিল।

এই বিশাল ভূ-কম্পনের ফলে সমুদ্রের নিচে থাকা টেকটোনিক প্লেটগুলো হঠাৎ সরে গিয়ে বঙ্গোপসাগরের তলদেশের এক বৃহৎ অংশকে উপরের দিকে ঠেলে দেয়। ভূত্বকের এই আকস্মিক উত্থানকে বিজ্ঞানীরা “সহ-উত্থান” হিসেবে উল্লেখ করেন। এর ফলেই সেন্টমার্টিনসহ টেকনাফের উপকূলবর্তী অনেক জায়গা, যা আগে ছিল পানির নিচে ডুবে থাকা চরাঞ্চল, স্থায়ী ভূমিতে রূপ নেয়।

গবেষণা বলছে, সেই রাতে দ্বীপের ভূভাগ প্রায় ১০ ফুট পর্যন্ত উপরে উঠে এসেছিল। এই ঘটনার সবচেয়ে স্পষ্ট প্রমাণ আজও দ্বীপজুড়ে দেখা যায়—সমুদ্রপৃষ্ঠের অনেক ওপর পর্যন্ত পাওয়া মৃত প্রবালের স্তর। পরীক্ষায় দেখা গেছে, একসময় এসব প্রবাল জীবিত ছিল গভীর পানির নিচে; কিন্তু ভূমিকম্পে ভূভাগ উপরে উঠে এলে তারা পানির অভাবে মারা যায়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ওই ভূমিকম্পটি শুধু একটি দ্বীপ সৃষ্টি করে থেমে থাকেনি; তা বদলে দিয়েছিল পুরো দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের ভূ-প্রকৃতি। কম্পনের পর সৃষ্ট শক্তিশালী জলোচ্ছ্বাস বহু অঞ্চলে তাণ্ডব চালায় এবং মানবজীবনেও আনেছিল ভয়াবহ ক্ষতি।

অর্থাৎ, সেন্টমার্টিন দ্বীপ আজ যাকে আমরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্বর্গ বলে চিনি—তার জন্ম হয়েছিল এক মহাপ্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে; আর সেই গল্প আজও লুকিয়ে আছে দ্বীপের পাথর, প্রবাল আর জোয়ার-ভাটার ছন্দে।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর