[email protected] রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫
২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে কেন সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে ভারত?

প্রতিদিনের বাংলা ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫ নভেম্বর ২০২৫ ৭:২৭ পিএম

বাংলাদেশ সীমান্তের নিকটবর্তী শিলিগুড়ি করিডোর—যা ‘চিকেনস

নেক’ নামে পরিচিত—এলাকায় ভারতের সাম্প্রতিক সামরিক কর্মকাণ্ড নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে আসাম ও উত্তর দিনাজপুর অঞ্চলে দুটি নতুন সেনা ঘাঁটি স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে ভারত। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই করিডোরটি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্যের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের সংযোগ রক্ষা করে বলে এর নিরাপত্তা ভারতীয় কৌশলগত পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দু।

বিশ্লেষকদের ভাষায়, এই অঞ্চলটি বহু দেশের সীমান্তঘেঁষা হওয়ায় ভারতের কাছে অত্যন্ত সংবেদনশীল। পাশাপাশি চীনের প্রভাব বিস্তার রোধ ও আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা মোকাবিলাও ভারতের লক্ষ্যবস্তুর অন্তর্ভুক্ত।

এদিকে, ভারতের এই তৎপরতার মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লালমনিরহাট সীমান্তের ৬২ কিলোমিটার নাকি ভারত দখল করে নিয়েছে—এমন ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বিজিবির কর্মকর্তারা সরেজমিনে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। বিজিবি ব্যাটালিয়ন–১৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম জানিয়েছেন, এই তথ্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে ছড়ানো হয়েছে। তাঁর মতে, সীমান্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং বিজিবি নিয়মিত টহল দিচ্ছে।

মোগলহাট সীমান্ত এলাকায় দেখা গেছে স্থানীয় বাসিন্দারা স্বাভাবিক কাজে ব্যস্ত, আর ধরলা নদীর দুই তীরেই আগের মতো চলাচল রয়েছে। এলাকাবাসীরও দাবি, জমি দখল বা অনুপ্রবেশের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিএসএফের টহল কিছুটা বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন সীমান্তসংলগ্ন মানুষেরা—আগের তুলনায় বেশি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে এবং অস্থায়ী টহলচৌকির সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।

১১ নভেম্বর সীমান্ত অতিক্রমের অভিযোগে বিএসএফের গুলিতে তিনজন বাংলাদেশি আহত হওয়ার ঘটনার কথাও সামনে এসেছে।


ভারতের দৃষ্টিকোণ

শিলিগুড়ি করিডোরের কাছে সাম্প্রতিক সামরিক মহড়া এবং ঘাঁটি স্থাপনের উদ্যোগকে “কৌশলগত সক্ষমতা বৃদ্ধির অংশ” হিসেবে দেখছেন ভারতের সাবেক মেজর জেনারেল দীপঙ্কর ব্যানার্জী। তাঁর মতে, সীমান্ত এলাকায় সেনা নয়, বরং বিএসএফের দায়িত্ব বেশি; সেনাবাহিনীর স্থাপনাগুলো পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে। চীনের কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে ডোকলাম অঞ্চলে উত্তেজনা ও চীনের আগ্রাসী নীতি ভারতের সতর্কতাকে আরও বাড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গে এ সামরিক উদ্যোগের সরাসরি সম্পর্ক অস্বীকার করেছেন ব্যানার্জী। তাঁর ব্যাখ্যায়, এটি মূলত সীমান্ত সুরক্ষা জোরদারের ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার অংশ।


বাংলাদেশি বিশ্লেষকদের ব্যাখ্যা

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী মনে করেন, ভারতের এই পদক্ষেপ তিনটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ:
১) শিলিগুড়ি করিডোরের নিরাপত্তা,
২) চীনের প্রভাব মোকাবিলা,
৩) ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বাংলাদেশের নীতিগত অবস্থানে সম্ভাব্য পরিবর্তন নিয়ে ভারতের উদ্বেগ।

তিনি মনে করেন, তিস্তা প্রকল্পে চীনের সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদি উপস্থিতি এবং লালমনিরহাট বিমানবন্দরের অবস্থান ভারতকে আরও সতর্ক করেছে। তাঁর ভাষায়, ভারতের এই সামরিক পদক্ষেপ সরাসরি আক্রমণের প্রস্তুতি নয়, বরং “গ্রে জোন ব্যাটল”—অর্থাৎ কোনো দেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করে সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রভাবিত করার কৌশল।

নাইম আশফাক বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকার এবং নিরাপত্তাজনিত অনিশ্চয়তা ভারতকে বাড়তি সতর্ক করেছে। তবুও তিনি মনে করেন, বাংলাদেশকে সামরিক কূটনীতি জোরদার করে পরিস্থিতির প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

অন্যদিকে ভারতীয় বিশেষজ্ঞ দীপঙ্কর ব্যানার্জী জানান, ভারত বাংলাদেশের কাছ থেকে কোনো সামরিক হুমকি অনুভব করে না; উদ্বেগের জায়গা হলো—বাংলাদেশ সীমান্তকে অন্য কোনো রাষ্ট্র যেন কৌশলগত সুযোগ হিসেবে ব্যবহার না করে।

 

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর