যুক্তরাজ্যের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম বিবিসি মার্কিন
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ক্ষমা চেয়েছে। বিষয়টি ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির ট্রাম্পের ভাষণের অংশ নিয়ে তৈরি একটি প্রামাণ্যচিত্রে তার বক্তব্য এমনভাবে দেখানোর কারণে ঘটেছে, যাতে মনে হয়েছে তিনি সহিংসতার আহ্বান জানাচ্ছেন।
ট্রাম্প এই ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। তবে বিবিসি জানিয়েছে, তারা ক্ষমা চাইছে, কিন্তু ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগের কোনও ভিত্তি তারা খুঁজে পায়নি। শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) আল জাজিরা এই তথ্য জানায়।
বিবিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সংস্থার চেয়ারম্যান সামির শাহ হোয়াইট হাউসে একটি চিঠি পাঠিয়ে ট্রাম্পকে জানিয়েছেন যে, প্যানোরামা অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি ওই প্রামাণ্যচিত্রে তার ভাষণ কেটে সাজানোর জন্য তারা দুঃখিত। এছাড়া সংস্থাটি জানিয়েছে, প্রামাণ্যচিত্রটি আর কোনও প্ল্যাটফর্মে প্রচারিত হবে না।
‘ট্রাম্প: আ সেকেন্ড চ্যান্স?’ নামে তৈরি প্রামাণ্যচিত্রটি একটি তৃতীয় পক্ষের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছিল। এতে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির ভাষণের তিনটি অংশ একত্রিত করা হয়েছিল, যার মধ্যে দুটি অংশের মধ্যে প্রায় এক ঘণ্টার ব্যবধান ছিল। সমালোচকরা অভিযোগ করেছেন, এই সংযোগের ফলে দর্শকের কাছে মনে হয় ট্রাম্প তার সমর্থকদের উত্তেজিত করছেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ট্রাম্প তার সমর্থকদের শান্তিপূর্ণ থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন, যা ডকুমেন্টারি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
ভাষণের পর ট্রাম্পের কিছু সমর্থক ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল ভবনের দিকে এগিয়ে গিয়ে ভবনে প্রবেশ করেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ২০২০ সালের নির্বাচনের ফল অনুমোদনের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করা। ট্রাম্প সেই নির্বাচনে হেরেছিলেন, তবে ২০২৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হন।
ট্রাম্পের আইনজীবীরা বিবিসিকে নোটিশ পাঠিয়ে প্রামাণ্যচিত্র প্রত্যাহার, ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। না হলে তারা কমপক্ষে ১ বিলিয়ন ডলারের মামলা করার হুমকি দিয়েছিলেন। অভিযোগ ছিল, প্রামাণ্যচিত্রে তাকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেখানো হয়েছে।
ঘটনার প্রভাবে বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি এবং বার্তা বিভাগের প্রধান ডেবোরা টার্নেস পদত্যাগ করেছেন। টার্নেস জানিয়েছেন, নিউজ ও কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সের দায়িত্ব তার কাঁধেই ছিল। ডেভি বলেন, ভুল হয়েছে, তবে বিবিসি এখনও সাংবাদিকতার মানের উচ্চ স্তরের প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য হয়।
আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের পক্ষে মামলা জেতা সহজ হবে না। কারণ, প্রমাণ করা কঠিন যে প্রামাণ্যচিত্রের কারণে তাকে কোনও ক্ষতি হয়েছে, এবং যুক্তরাজ্যে মামলা করার সময়সীমা পেরিয়ে গেছে। তাছাড়া ক্ষতিপূরণের পরিমাণও সাধারণত কম হয়। তবে ট্রাম্প অতীতে মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করে বড় অংকের ক্ষতিপূরণ আদায় করেছেন, তাই তিনি সম্ভাব্যভাবে বিবিসির ভুলকে কাজে লাগিয়ে সমঝোতা চাইতে পারেন।
এর আগে ট্রাম্প এবিসি ও সিবিএস-এর সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেছেন, যেখানে যথাক্রমে ১৫ ও ১৬ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিল।
এসআর
মন্তব্য করুন: