[email protected] বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫
২১ কার্তিক ১৪৩২

বাংলাদেশের সঙ্গে পাওনা নিয়ে বিরোধ, আন্তর্জাতিক সালিশিতে যাচ্ছে আদানি

প্রতিদিনের বাংলা ডেস্ক

প্রকাশিত: ৫ নভেম্বর ২০২৫ ৬:৪৪ এএম

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ সংক্রান্ত অর্থপ্রদানের বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আন্তর্জাতিক সালিশি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে গৌতম আদানির মালিকানাধীন ভারতীয় প্রতিষ্ঠান আদানি পাওয়ার। সোমবার প্রকাশিত আদানি গ্রুপের এক বিবৃতির বরাতে রয়টার্স জানায়, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহ সংক্রান্ত অর্থসংক্রান্ত জটিলতা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মীমাংসার চেষ্টা করছে।

 

 

আদানি পাওয়ার জানায়, বিদ্যুৎ সরবরাহের খরচ নির্ধারণ ও বিল প্রদানের কিছু নির্দিষ্ট অংশ নিয়ে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সঙ্গে মতবিরোধ রয়েছে। উভয় পক্ষই এখন সালিশি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিষয়টি দ্রুত ও পারস্পরিকভাবে সমাধানের আশায় এগোচ্ছে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান রয়টার্সকে বলেন, “আলোচনা এখনো চলছে; আলোচনার ফলের ওপর নির্ভর করেই সালিশি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার প্রয়োজন হবে কি না, তা ঠিক করা হবে।”

২০১৭ সালে আদানি পাওয়ার ও বিপিডিবির মধ্যে ২৫ বছরের জন্য একটি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) স্বাক্ষরিত হয়। এর আওতায় ভারতের ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় অবস্থিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। বর্তমানে আদানি পাওয়ার বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎচাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ পূরণ করে।

রয়টার্সের আগের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সরকার আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ তোলে। অভিযোগ ছিল—ভারত সরকারের কাছ থেকে পাওয়া কর-সুবিধার অংশ বাংলাদেশকে না দেওয়ায় চুক্তির শর্ত লঙ্ঘিত হয়েছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য আদানি পাওয়ারকে ১৪.৮৭ টাকা (০.১২২ মার্কিন ডলার) হারে মূল্য পরিশোধ করেছে, যা ভারতের অন্যান্য কোম্পানি থেকে কেনা বিদ্যুতের গড় মূল্যের তুলনায় (প্রায় ৯.৫৭ টাকা) বেশি।

তবে প্রতিষ্ঠানটির দাবি, বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে পাওনা অর্থ অনেক কমে এসেছে। চলতি বছরের মে মাসে আদানির বকেয়া ৯০০ মিলিয়ন ডলারে নেমে আসে, যা বছরের শুরুতে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার ছিল। বর্তমানে বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ১৫ দিনের বিদ্যুৎ সরবরাহের সমান।

বিবৃতিতে আদানি পাওয়ার জানায়, তারা বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ এবং বাংলাদেশে নির্ভরযোগ্য ও মানসম্মত বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখবে।

কর-সুবিধা ও বিতর্ক

আদানি পাওয়ারের গড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পূর্ণ আমদানি করা কয়লা দিয়ে পরিচালিত হয় এবং উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রপ্তানি করা হয়। ২০১৯ সালে ভারত সরকার গড্ডাকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (SEZ) হিসেবে ঘোষণা দেয়, যার ফলে প্রতিষ্ঠানটি আয়কর ও অন্যান্য শুল্কে ছাড় পায়।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালের চুক্তি অনুযায়ী, করহার বা সুবিধা পরিবর্তিত হলে বাংলাদেশকে তা দ্রুত জানানো এবং মূল্য নির্ধারণে সেই পরিবর্তন প্রতিফলিত করার কথা ছিল। তবে বিপিডিবির পক্ষ থেকে দু’দফা চিঠি পাঠানো হলেও আদানি পাওয়ার কোনো আনুষ্ঠানিক সাড়া দেয়নি।

বিপিডিবির কর্মকর্তাদের ধারণা, ভারত সরকারের করছাড় সুবিধা বিদ্যুৎমূল্যে অন্তর্ভুক্ত করলে বাংলাদেশের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে প্রায় ০.৩৫ সেন্ট সাশ্রয় হতো। তাদের অভ্যন্তরীণ নথি অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত গড্ডা কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে ৮.১৬ বিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে, যেখানে কর ছাড়ের হিসাব অন্তর্ভুক্ত করলে প্রায় ২৮.৬ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হতে পারত।

 

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর