বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনীতিতে সম্ভাব্য ঝুঁকির শঙ্কা অনেকটা কমে গেছে।
এখন দেশটিকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে বৈদেশিক খাতে যথেষ্ট উন্নতি করতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রার জোগান বাড়াতে হবে। এর মাধ্যমে স্থানীয় মুদ্রায় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে।
এর জন্য সরকারকে কিছু কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে। এর মধ্যে সরকারকে ব্যয় কমাতে হবে। ভর্তুকির হারও কমাতে হবে। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ করতেও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
এর মধ্যে সরকারকে ব্যয় কমাতে হবে। ভর্তুকির হারও কমাতে হবে। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ করতেও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ঢাকা সফররত আইএমএফ মিশন এসব সুপারিশ করেছে।
আইএমএফের ঢাকা মিশনের তৈরি একটি প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনটি তারা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে পাঠিয়েছে।
মূল্যস্ফীতির হার কমাতে মুদ্রানীতিকে সংকোচনমুখী করার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপকে সময়োচিত পদক্ষেপ হিসাবে অভিহিত করে আইএমএফ বলেছে, এ ধরনের পদক্ষেপ আরও আগে নেওয়া উচিত ছিল।
একই সঙ্গে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমদানির এলসি মার্জিনের ওপর থেকে আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার বিষয়টিকেও ইতিবাচক হিসাবে দেখছে। এর আগে গত সরকারের সময়ে আইএমএফ আমদানিতে এলসি মার্জিন তুলে দেওয়ার সুপারিশ করেছিল।
সংস্থাটি বলেছে, এলসি মার্জিন তুলে দেওয়ার ফলে বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়বে। এর মাধ্যমে ডলারের আয় বাড়াতে ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়বে। ফলে তারা ডলার সংগ্রহে চেষ্টা করবে।
ফলে আমদানি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। কারণ বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি বড় অংশই আমদানি নির্ভর। আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার কঠিন হয়ে পড়বে।
গত সরকারের আমলেও মূল্যস্ফীতির হার কমাতে মুদ্রানীতি আরও কঠোর করার চাপ দিচ্ছিল আইএমএফ। কিন্তু সরকার তা করেনি। ফলে মূল্যস্ফীতির হারও কমেনি। এখন নতুন গভর্নর এসেই ঘোষণা দিয়েছেন মুদ্রানীতিকে আরও কঠোর করে মূল্যস্ফীতির হার কমানো হবে।
এটিকে ইতিবাচক মনে করছে আইএমএফ। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুই দফায় নীতি সুদের হার বাড়িয়েছে। এর ফলে ব্যাংকগুলোর মধ্যেও প্রতিযোগিতা বেড়েছে। তারা আমানত সংগ্রহে বেশি সুদ অফার করছে।
এতে অনেক ব্যাংকে আমানত বাড়তে শুরু করেছে। ফলে ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকটও কাটতে শুরু করেছে। দীর্ঘমেয়াদে এই নীতি ব্যাংক খাতের জন্য সুফল বয়ে আনবে।
আইএমএফ বলেছে, সরকারকে খরচ কমাতে হবে। বিশেষ অপ্রয়োজনীয় খরচ কমালে সরকারের ঋণের বোঝা কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব হবে। এতে সরকারের সুদের চাপ কমবে।
এসব পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ঝুকির শঙ্কা কমছে। আগের ঝুঁকির মাত্রা বেশি ছিল। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশ এখন সঠিক পথে রয়েছে বলেও আইএমএফ মনে করে।
এদিকে বৃহস্পতিবার আইএমএফের প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনেও বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশসহ সদস্য সব দেশের আর্থিক অবস্থাই উপস্থাপন করা হয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত আইএমএফ তাদের বর্ষ গণনা করে। এ হিসাবে গত বছরে আইএমএফ থেকে বাংলাদেশ নতুন ঋণ পেয়েছে ১১৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
বিভিন্ন উপকরণের বিপরীতে এসব ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ। এর বিপরীতে বাংলাদেশ একই সময়ে আগে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করেছে ২৭ কোটি ২২ লাখ ডলার।
সূত্র জানায়, আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলারের একটি ঋণ কর্মসূচি চলমান রয়েছে। এর পরিমাণ আরও ৩০০ কোটি ডলার বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে। আইএমএফ এতে সম্মত হয়েছে। এ বিষয়টি নিয়েও চলমান মিশন আলোচনা করছে।
এসআর
মন্তব্য করুন: