লোহিত সাগরের গুরুত্বপূর্ণ জলপথে যখন বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা নিয়ে হুতি বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা চরমে, ঠিক সেই সময় ইয়েমেনের জুকার দ্বীপে গড়ে উঠছে এক রহস্যময় বিমানঘাঁটি।
কে বা কারা এই ঘাঁটি নির্মাণ করছে, তা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ স্বীকার না করলেও, আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে এটি নতুন শক্তির উত্থানের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জুকার দ্বীপটি ইয়েমেনের উপকূল থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে, হুতি নিয়ন্ত্রিত হুদায়দা বন্দরের দক্ষিণ-পূর্বে এবং বাব আল-মান্দেব প্রণালির কাছাকাছি অবস্থিত। এই প্রণালি দিয়েই প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ তেল, গ্যাস ও বাণিজ্যিক পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল করে। ফলে দ্বীপটির অবস্থান সামরিক ও বাণিজ্যিক—দুই দিক থেকেই কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, দ্বীপে একটি বড় আকারের রানওয়ে নির্মাণ চলছে। এপ্রিল মাসে ডক নির্মাণের প্রাথমিক ধাপ শুরু হয়, আর কয়েক মাসের মধ্যেই প্রায় দুই কিলোমিটারজুড়ে অ্যাসফল্ট বিছানো সম্পন্ন হয়। অক্টোবরের চিত্রে দেখা যায়, রানওয়ের মার্কিং পর্যন্ত শেষ হয়েছে। কাজের এই দ্রুতগতিতে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, এর পেছনে কোনো আন্তর্জাতিক শক্তির প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা রয়েছে।
যদিও এখনো কোনো দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘাঁটির মালিকানা স্বীকার করেনি, তবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর দাবি—সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) সঙ্গে সম্পর্কিত কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এই প্রকল্পে অর্থায়ন ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে। বর্তমানে দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তারেক সালেহের বাহিনীর হাতে, যিনি সাবেক ইয়েমেনি প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহের ভাতিজা এবং ইউএইর ঘনিষ্ঠ মিত্র।
জুকার দ্বীপের ইতিহাসও জটিল। ১৯৯০-এর দশকে এটি ইরিত্রিয়ার দখলে চলে গিয়েছিল। পরে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের ভিত্তিতে ১৯৯৮ সালে ইয়েমেন পুনরায় এর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়। এর পর থেকেই দ্বীপটি আঞ্চলিক শক্তিগুলোর কৌশলগত আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিমানঘাঁটির অন্যতম উদ্দেশ্য হতে পারে হুতি বিদ্রোহীদের সমুদ্রপথে হামলা প্রতিরোধ এবং ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর অস্ত্র সরবরাহ রোধ। একই সঙ্গে লোহিত সাগর ও বাব আল-মান্দেব প্রণালির আন্তর্জাতিক বাণিজ্যপথ সুরক্ষিত রাখাও এর আরেকটি লক্ষ্য হতে পারে।
ঘাঁটিটি সম্পূর্ণ চালু হলে পুরো লোহিত সাগর অঞ্চল কার্যত নজরদারির আওতায় চলে আসবে। এতে শুধু ইয়েমেন নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বহু দেশের ওপর ভূরাজনৈতিক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।
ফলে এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটিই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে—
জুকার দ্বীপের এই রানওয়ে কি কেবল একটি বিমানঘাঁটি, নাকি মধ্যপ্রাচ্যে নতুন কোনো শক্তির উত্থানের ঘোষণা?
এসআর
মন্তব্য করুন: