[email protected] সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫
৪ কার্তিক ১৪৩২

৭ লাখ বছর পর জেগে উঠছে ইরানের তাফতান আগ্নেয়গিরি!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯ অক্টোবর ২০২৫ ৯:২৬ পিএম

সংগৃহীত ছবি

প্রায় সাত লাখ বছর নিস্তব্ধ থাকার পর জেগে উঠছে ইরানের তাফতান আগ্নেয়গিরি।

সাম্প্রতিক এক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, আগ্নেয়গিরিটির চূড়ার নিচের ভূমি অস্বাভাবিকভাবে ফুলে উঠছে, যা ম্যাগমা ও গ্যাসের সঞ্চয় নির্দেশ করছে— অর্থাৎ আগ্নেয়গিরিটি নতুন করে সক্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

লাইভ সায়েন্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত তাফতানের একটি নির্দিষ্ট এলাকায় ভূমি প্রায় ৯ সেন্টিমিটার উঁচু হয়েছে। বিজ্ঞানীরা এটিকে “অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূতাত্ত্বিক সংকেত” বলে উল্লেখ করেছেন, কারণ এত দীর্ঘ সময় নিষ্ক্রিয় থাকা কোনো আগ্নেয়গিরিতে এমন পরিবর্তন সাধারণত ম্যাগমাটিক কার্যকলাপের পূর্বাভাস হয়ে থাকে।

গবেষণার প্রধান বিজ্ঞানী পাবলো গঞ্জালেজ বলেন,

“তাফতানকে এতদিন মৃত আগ্নেয়গিরি হিসেবে ধরা হতো। কিন্তু নতুন এই ভূমিকম্পীয় ও গ্যাসীয় কার্যকলাপ আমাদের ধারণা বদলে দিচ্ছে। এখন বলা যায়— এটি মৃত নয়, বরং দীর্ঘদিন সুপ্ত অবস্থায় ছিল এবং আবার জেগে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছে।”

কেন বাড়ছে উদ্বেগ?

২০২০ সাল পর্যন্ত স্যাটেলাইট চিত্রে তাফতানকে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় মনে করা হলেও, ২০২৩ সালে স্থানীয়রা আগ্নেয়গিরি থেকে ধোঁয়া ও গ্যাস নির্গমন দেখতে পান। এমনকি ৫০ কিলোমিটার দূর থেকেও গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ভূমিকম্প বা বৃষ্টিপাত নয়— এই ভূমি উত্থান সরাসরি আগ্নেয়গিরির অভ্যন্তরে চাপ সঞ্চয়ের ফল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাৎক্ষণিকভাবে বড় কোনো অগ্ন্যুৎপাতের সম্ভাবনা নেই। তবে পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে যেতে পারে। সম্ভাব্য অগ্ন্যুৎপাত শান্ত ও ধীরগতিরও হতে পারে, আবার বিধ্বংসী আকারেও দেখা দিতে পারে। তাই আগাম সতর্কতা ও পর্যবেক্ষণ এখন অপরিহার্য।

তাফতান আগ্নেয়গিরি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত তথ্য

তাফতান আগ্নেয়গিরির উচ্চতা প্রায় ৩,৯৪০ মিটার। এটি ইরান-পাকিস্তান সীমান্তে অবস্থিত মাকরান আগ্নেয় বলয়ের একমাত্র সক্রিয় আগ্নেয়গিরি।
আরবীয় টেকটোনিক প্লেট ইউরেশীয় প্লেটের নিচে সরে যাওয়ার ফলে এর সৃষ্টি হয়েছিল।
মানব ইতিহাসে এর কোনো অগ্ন্যুৎপাতের নথি নেই— সর্বশেষ বড় অগ্ন্যুৎপাত ঘটেছিল প্রায় ৭ লাখ বছর আগে।

গবেষণায় যা জানা গেছে

বিজ্ঞানীরা এখন তাফতান থেকে নির্গত গ্যাস ও তাপমাত্রার পরিবর্তন নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন, যা আগ্নেয়গিরির অভ্যন্তরে চাপ ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট ধারণা দিতে সহায়ক হবে।

গবেষক ড. গঞ্জালেজ বলেন,

“আমাদের লক্ষ্য আতঙ্ক সৃষ্টি নয়, বরং আগাম সতর্কবার্তা প্রদান। তাফতানের এই পরিবর্তনগুলো উপেক্ষা করা হলে ভবিষ্যতে তা বড় ধরনের দুর্যোগে রূপ নিতে পারে।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর