[email protected] মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫
২২ আশ্বিন ১৪৩২

বাংলাদেশের আকাশ প্রতিরক্ষায় নতুন যুগ: ২০টি জে-১০ যুদ্ধবিমান কিনছে সরকার, ব্যয় ২৭ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৭ অক্টোবর ২০২৫ ৭:৩২ পিএম

সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে আধুনিকায়ন ও জাতীয় আকাশ প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করতে বড় ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।

এর অংশ হিসেবে চীনের তৈরি ২০টি জে-১০ সিই মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২২০ কোটি মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৭ হাজার ৬০ কোটি টাকা।

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, যুদ্ধবিমানগুলো ক্রয়, প্রশিক্ষণ, খুচরা যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয়সহ পুরো প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে ২০২৭ সালের মধ্যে। ব্যয়ের অর্থ পরিশোধ করা হবে ১০ বছরের কিস্তিতে, যা চলবে ২০৩৫–৩৬ অর্থবছর পর্যন্ত।

জে-১০ সিই: চীনের ৪.৫ প্রজন্মের উন্নত যুদ্ধবিমান

জে-১০ সিই হলো চীনের বিমানবাহিনীতে ব্যবহৃত জে-১০সি মডেলের রপ্তানি সংস্করণ। এটি একটি ৪.৫ প্রজন্মের মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট, যা আকাশ থেকে আকাশ ও আকাশ থেকে স্থল—দুই ধরনের যুদ্ধেই সমানভাবে দক্ষ।

গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সংঘাত চলাকালে পাকিস্তান দাবি করেছিল, তাদের জে-১০ সিই যুদ্ধবিমান ভারতের একটি রাফায়েল জেট ভূপাতিত করেছে। যদিও সেই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি, এরপর থেকেই জে-১০ সিই আন্তর্জাতিক পরিসরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসে।

চুক্তির কাঠামো ও ব্যয়ের বিশদ বিবরণ

সরকারি নথি অনুযায়ী, প্রতিটি ফাইটার জেটের আনুমানিক মূল্য ৬ কোটি মার্কিন ডলার (প্রায় ৭৩০ কোটি টাকা)।
২০টি জেটের মূল মূল্য দাঁড়াবে প্রায় ১২০ কোটি ডলার (১৪,৬০০ কোটি টাকা)।

প্রশিক্ষণ, যন্ত্রপাতি, পরিবহন, বিমা, অবকাঠামো উন্নয়ন, ভ্যাট ও কমিশনসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২২০ কোটি মার্কিন ডলার।

পুরো ক্রয় কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে জিটুজি (গভর্নমেন্ট-টু-গভর্নমেন্ট) পদ্ধতিতে চীনের সঙ্গে সরাসরি চুক্তির মাধ্যমে। এর জন্য ১১ সদস্যের একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান।

কমিটির দায়িত্ব ও অগ্রগতি

গঠিত কমিটি চুক্তির খসড়া যাচাই, মূল্য নির্ধারণ, পরিশোধের শর্ত চূড়ান্তকরণ এবং সংরক্ষণ, প্রশিক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা নির্ধারণে কাজ করছে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মার্চ মাসের চীন সফরেই জে-১০ সিই ক্রয় নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়। চীনা কর্তৃপক্ষ এতে ইতিবাচক সাড়া দেয়। পরে এপ্রিল মাসে কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করে।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বর্তমান সক্ষমতা

ওয়ারপাওয়ারবাংলাদেশ ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর মোট ২১২টি এয়ারক্রাফট রয়েছে, যার মধ্যে ৪৪টি ফাইটার জেট।
এদের বেশিরভাগই চীনা তৈরি এফ-৭ মডেল। এছাড়া রয়েছে মিগ-২৯বি জেট, ইয়াক-১৩০ লাইট অ্যাটাক ট্রেইনার, এবং পরিবহন কাজে ব্যবহৃত সি-১৩০জে বিমান।

হেলিকপ্টার ইউনিটে রয়েছে রাশিয়ান এমআই-১৭ ও এমআই-১৭১ সিরিজ, যা সেনা পরিবহন ও গানশিপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

জে-১০ সিরিজ কেন গুরুত্বপূর্ণ

চীনের বাইই অ্যারোবেটিক টিম প্রথম জে-১০এ মডেল ব্যবহার শুরু করে ২০০৯ সালে। ২০২৩ সালে এর আধুনিক সংস্করণ জে-১০সি চালু হয়, যা উন্নত রাডার, দীর্ঘ-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং অত্যাধুনিক এভিওনিক্সে সজ্জিত।

বিশ্লেষকদের মতে, জে-১০ সিই যুদ্ধবিমান সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এক নতুন প্রযুক্তিগত যুগে প্রবেশ করবে, যা আকাশ প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ও কৌশলগত ভারসাম্য—উভয় ক্ষেত্রেই বড় পরিবর্তন আনবে।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর