সুদানের দারফুর অঞ্চলের এল-ফাশের শহরকে ঘিরে বিশালাকার মাটির দেয়াল তুলছে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব (এইচআরএল) স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে, চলতি বছরের মে মাস থেকে শুরু হওয়া এ নির্মাণকাজে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রায় এক বছর ধরে অবরুদ্ধ এল-ফাশের সেনাবাহিনীর শেষ প্রধান ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে শহরটিতে প্রায় তিন লাখ মানুষ আটকে আছেন, যারা কার্যত এক “মৃত্যুঘেরের” ভেতরে দিন কাটাচ্ছেন।
সুদান ডাক্তার্স নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, আরএসএফ পরিকল্পিতভাবে সাধারণ মানুষকে নিশানা করছে। সংস্থাটির চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ ফয়সাল হাসান জানান, শনিবার শহরের কেন্দ্রে চালানো গোলাবর্ষণে ২৪ জন নিহত ও অন্তত ৫৫ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে পাঁচজন নারীও ছিলেন। এর মাত্র তিন দিন আগে শহরের সবচেয়ে বড় হাসপাতালে হামলা চালানো হয়, যেখানে রোগী ও চিকিৎসকদের ওপর নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়।
ইয়েল গবেষকদের ভাষায়, এটি কোনো প্রতিরক্ষামূলক বাঁধ নয়, বরং পুরো শহরকে একটি ‘কিল বক্স’ বা মৃত্যুঘেরে রূপান্তরের পরিকল্পনা। তাদের তথ্যে দেখা যায়—
সবুজ রেখা: ৯ কিমি (১৪–২৪ জুলাইয়ের মধ্যে নির্মিত)
নীল রেখা: ৭ কিমি (৫ মে–১২ জুলাইয়ের মধ্যে)
হলুদ রেখা: ৬ কিমি (৩–১৯ আগস্টের মধ্যে)
লাল রেখা: ৯ কিমি (১৩–২৭ আগস্টের মধ্যে নির্মাণাধীন)
শহর ঘিরে এসব বাঁধ তৈরি হওয়ায় পালানোর সব পথ কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। একই সঙ্গে খাদ্য, ওষুধ ও মানবিক সহায়তা পৌঁছানোও প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
এএফপিকে ৩৭ বছর বয়সী স্কুলশিক্ষক হালিমা হাশিম বলেন, “এখানে থাকা মানে ধীরে ধীরে মৃত্যু বরণ করা। কিন্তু পালানোর চেষ্টা করাটাও মৃত্যুর সমান ভয়ঙ্কর। আমাদের পক্ষে পালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।”
স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, আলসেন গ্রামে নির্মাণাধীন বাঁধের কারণে ২০ মে থেকে ৬ জুলাইয়ের মধ্যে পুরো গ্রাম প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এছাড়া বিমানবন্দরের কাছে সেনাদের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি পানি সরবরাহ কেন্দ্রও আরএসএফ হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, যদি এল-ফাশের পতন ঘটে, তবে আরএসএফ পুরো পশ্চিম দারফুরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে। এতে সুদান কার্যত দুই ভাগ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে, কারণ সেনাবাহিনী ও আরএসএফ ইতোমধ্যে পৃথক সরকার গঠন করেছে।
সেন্ট্রাল দারফুরের সাবেক গভর্নর আদিব আব্দেল রহমান ইউসুফ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “এল-ফাশেরের সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বড় মূল্য দিচ্ছে। তাদের বাঁচাতে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।”
এসআর
মন্তব্য করুন: