[email protected] বৃহঃস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫
১৩ ভাদ্র ১৪৩২

চীনের মেগা বাঁধে পানিসংকটের আশঙ্কা, ভারতও প্রস্তুত নিজস্ব প্রকল্পে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৫ আগষ্ট ২০২৫ ৫:২৫ পিএম

সংগৃহীত ছবি

তিব্বতে চীনের প্রস্তাবিত মেগা জলবিদ্যুৎ বাঁধ নিয়ে গভীর উদ্বেগে রয়েছে ভারত।

 আশঙ্কা করা হচ্ছে, শুষ্ক মৌসুমে এই বাঁধ চালু হলে একটি প্রধান নদীর পানিপ্রবাহ প্রায় ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। এতে দুই দেশের মধ্যে নতুন এক পানিসংকট বা পানিযুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

রয়টার্সকে দেওয়া চারটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, চীনের নতুন বাঁধের প্রভাব মোকাবিলায় দ্রুত নিজস্ব বাঁধ নির্মাণ পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে দিল্লি।

 

২০০০ সালের শুরুর দিক থেকেই অরুণাচল প্রদেশে একাধিক বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় ভারত। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ ছিল, এসব বাঁধ তাদের গ্রাম ও কৃষিজমি ডুবিয়ে দেবে এবং জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলবে। এ কারণে প্রকল্পগুলো স্থগিত হয়ে যায়।
কিন্তু ২০২০ সালের ডিসেম্বরে চীন যখন বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণের ঘোষণা দেয়, তখন ভারতের কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যায়।

ভারতের রাষ্ট্রীয় জলবিদ্যুৎ কোম্পানি এনএইচপিসি ইতোমধ্যেই অরুণাচল প্রদেশের আপার সিয়াং অঞ্চলে একটি বৃহৎ বাঁধ নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রস্তাবিত এই বাঁধের ধারণক্ষমতা ১৪ বিলিয়ন ঘনমিটার (বিসিএম)। প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে এটি হবে ভারতের সবচেয়ে বড় বাঁধ, যা—

  • শুষ্ক মৌসুমে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করবে,
  • বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, চীনের বাঁধ কার্যকর হলে ভারতে প্রবাহিত বার্ষিক পানির এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। এর ফলে গুয়াহাটির মতো বড় শহর পানিসংকটে পড়তে পারে। চীনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, তারা প্রায় ৪০ বিলিয়ন ঘনমিটার পানি সরাতে পারবে।

অন্যদিকে ভারতের প্রস্তাবিত বাঁধ ১৪ বিসিএম পানি সঞ্চয় করতে সক্ষম হবে। শুষ্ক মৌসুমে এ পানি ছেড়ে দিয়ে ক্ষতি কমানো সম্ভব হবে। তাছাড়া বাঁধের ৩০ শতাংশ ধারণক্ষমতা খালি রাখা হলে চীন হঠাৎ বেশি পানি ছেড়ে দিলে সেটি শোষণ করে বিপর্যয় এড়ানো যাবে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য জানিয়েছে, তাদের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিত্তিতে তৈরি এবং এটি ভাটির দেশগুলোর (ভারত ও বাংলাদেশসহ) পানি বা পরিবেশের কোনো ক্ষতি করবে না। বরং দীর্ঘদিনের মতোই তারা সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।

অন্যদিকে ভারতের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে গত ১৮ আগস্ট ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে এ উদ্বেগ স্পষ্টভাবে তুলে ধরেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাঁধ নির্মাণকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতা কৌশলগত টানাপোড়েন আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। ভবিষ্যতে পানিসম্পদ নিয়ে সংঘাত এড়াতে জরুরি ভিত্তিতে আলোচনা ও সহযোগিতা বাড়ানো প্রয়োজন।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর