[email protected] বৃহঃস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫
১৩ ভাদ্র ১৪৩২

গৃহযুদ্ধের মাঝেই মিয়ানমারে নির্বাচন ঘোষণা, কী চাইছে সামরিক জান্তা?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮ আগষ্ট ২০২৫ ৫:১২ পিএম

সংগৃহীত ছবি

গৃহযুদ্ধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা।

সোমবার  (১৮ আগস্ট) দেশটির জাতীয় নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, আগামী ২৮ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে বিদ্রোহীদের প্রতিরোধ, চলমান সহিংসতা এবং আন্তর্জাতিক চাপের কারণে বিশ্লেষকরা ইতোমধ্যেই একে ‘প্রহসন নির্বাচন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। খবর—এএফপি।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে। তারা অভিযোগ তোলে যে আগের নির্বাচনে কারচুপি হয়েছিল, যদিও কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। এরপর থেকে দেশজুড়ে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। বিদ্রোহী ও গণতন্ত্রপন্থি গোষ্ঠীগুলো বহু অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে এবং সেখানে নির্বাচন ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই নির্বাচনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইংয়ের ক্ষমতা ধরে রাখা। তিনি প্রেসিডেন্ট, সেনাপ্রধান কিংবা নতুন কোনো পদে থেকে নিজের প্রভাব বজায় রাখতে চান। রাখাইনের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “এই নির্বাচন জনগণের জন্য নয়, কেবল সামরিক স্বৈরশাসকদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য।”

জাতিসংঘও নির্বাচনী প্রক্রিয়াটিকে ‘প্রতারণা’ আখ্যা দিয়েছে। সংস্থাটির বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি সামরিক শাসনকে নতুনভাবে বৈধতা দেওয়ার প্রচেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়। এদিকে নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চি এখনো কারাগারে বন্দি, আর অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আইনপ্রণেতারা ইতোমধ্যেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।

গত জুলাইয়ে জান্তা সরকার সমালোচক ও আন্দোলনকারীদের দমন করতে কঠোর আইন প্রণয়ন করে। নতুন আইনে নির্বাচনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ভোটকেন্দ্র বা ব্যালট পেপার নষ্ট করা কিংবা নির্বাচনকর্মীদের ভয় দেখানোর অপরাধে সর্বোচ্চ ২০ বছরের সাজা নির্ধারণ করা হয়েছে।

গৃহযুদ্ধে এ পর্যন্ত হাজারো মানুষ নিহত হয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন অন্তত ৩৫ লাখ মানুষ। জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি দারিদ্র্যের ফাঁদে পড়ে নতুন করে মানবিক সংকটে পড়েছে। যদিও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো গত বছর থেকে সমন্বিত আক্রমণ চালিয়ে একাধিক এলাকা দখল করে নিয়েছিল, জান্তা বিমান হামলা ও বাধ্যতামূলক সেনাসেবার মাধ্যমে কিছু অঞ্চলে পুনরায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষণায় বলা হয়েছে, “২৮ ডিসেম্বর সংসদীয় আসনগুলোর জন্য বহু দলীয় সাধারণ নির্বাচনের প্রথম ধাপ অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তী ধাপের তারিখ পরে জানানো হবে।” তবে বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, ভোট ঘিরে সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

সব মিলিয়ে স্বাধীনতার পর থেকে প্রায় পুরো সময়ই সেনাশাসনের অধীনে থাকা মিয়ানমারে আসন্ন নির্বাচন নিয়েও তৈরি হয়েছে ভয়, অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতার পরিবেশ।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর