একসময়কার পরম বন্ধু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছেন।
গুজরাট থেকে দিল্লি হয়ে লালকেল্লায় বিজয়ী নেতার আসনে বসা মোদি আজ শুল্কের আগুনে দিশেহারা। একদিকে ট্রাম্পের কড়া বাণিজ্যনীতি, অন্যদিকে দেশীয় রাজনীতির চাপ—সব মিলিয়ে ভারতের জন্য পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্ক ভারতের অর্থনীতিতে কোভিড-১৯ মহামারির চেয়েও ভয়াবহ অভিঘাত ফেলতে পারে। ২০২৪ সালে ভারত-আমেরিকা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল প্রায় ২১ হাজার ১২৩ কোটি মার্কিন ডলার, যার মধ্যে ভারতের রপ্তানি ছিল ১২ হাজার ৮৯০ কোটি ডলার। উচ্চ শুল্কের কারণে সেই বিশাল রপ্তানি খাতই হুমকির মুখে পড়েছে।
কেন ভারতের ওপর চাপ বাড়াল ট্রাম্প?
বিশ্লেষকদের মতে, দুটি কারণে মিত্র দেশ ভারতকে নিশানায় নিয়েছেন ট্রাম্প—
১. ভারত কৃষিপণ্যসহ বাইরের পণ্যের ওপর গড়ে ৩৯ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসিয়ে বাজার সুরক্ষিত রেখেছে।
২. মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ভারত রাশিয়া থেকে তেল ও অস্ত্র আমদানি করছে এবং প্রক্রিয়াজাত করে অন্য দেশে রপ্তানি করছে।
এনডিটিভি প্রফিটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওয়ালমার্ট, অ্যামাজন, টার্গেট ও গ্যাপের মতো মার্কিন খুচরা জায়ান্টরা ইতোমধ্যে ভারত থেকে তাদের অর্ডার স্থগিত করেছে।
কৃষকদের জন্য নতুন বিপদ
ভারতে কৃষকদের দুর্দশা দীর্ঘদিনের। উৎপাদন খরচ বেশি হলেও ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় প্রতিবছর হাজারো কৃষক আত্মহত্যা করেন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, শুধু ২০২২ সালেই আত্মহত্যা করেছেন ১১ হাজার ২৯০ জন কৃষক ও কৃষিশ্রমিক—গড়ে প্রতি ঘণ্টায় একজন। এখন যদি ভারত বাজার উন্মুক্ত করে দেয়, তবে সস্তা দামের মার্কিন কৃষিপণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না দেশীয় কৃষকরা। এতে রাজনৈতিকভাবেও ভয়াবহ চাপে পড়তে পারে মোদি সরকার।
বাংলাদেশের জন্য নতুন সম্ভাবনা
যেখানে ভারত ও চীনের মতো অর্থনীতি শুল্কঝড়ে বিপর্যস্ত, সেখানে বাংলাদেশ পাচ্ছে বাড়তি সুবিধা। ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির শুল্ক ৩৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করেছে। এতে পোশাক খাতে নতুন দিগন্ত খুলে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই মার্কিন ক্রেতারা ভারত ও চীন থেকে অর্ডার সরিয়ে বাংলাদেশে দিচ্ছেন।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার এই সময় মার্কিন-ভারত দ্বন্দ্ব বাংলাদেশের জন্য রপ্তানি বাজারে এক বিরাট সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।
এসআর
মন্তব্য করুন: