যুক্তরাজ্যের হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেটের এমপি এবং সাবেক সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিক দাবি করেছেন, বাংলাদেশের দুর্নীতি মামলায় তিনি রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের ‘বলির পাঠা’।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, মাত্র এক সপ্তাহ আগে এক সাংবাদিকের মাধ্যমে জানতে পারেন যে, বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন হয়েছে।
বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ— সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি পরিচয় ব্যবহার করে তিনি মায়ের, ভাইয়ের ও বোনের জন্য পূর্বাচলে জমি নিশ্চিত করেছিলেন। টিউলিপ এই অভিযোগকে ‘সম্পূর্ণ হাস্যকর’ বলে উল্লেখ করেন। তার ও আরও ২০ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরুর তারিখ ঠিক হয়েছে ১১ আগস্ট। তবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে বা ভিডিও কনফারেন্সে হাজির হবেন কিনা, তা এখনও ঠিক করেননি।
টিউলিপ জানান, তিনি ব্রিটিশ আইনজীবী হুগো কিথ কেসির পরামর্শ নিচ্ছেন এবং এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক সমন পাননি। পরিস্থিতিকে তিনি “কাফকায়েস্ক দুঃস্বপ্ন” আখ্যা দিয়ে বলেন, “বিদেশে আমাকে বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে, অথচ আমি জানি না অভিযোগের প্রকৃত ভিত্তি কী।”
বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি না থাকলেও দোষী সাব্যস্ত হলে বিষয়টি নতুন করে জটিল হতে পারে। লেবার পার্টি ক্ষমতায় আসার পর অর্থনৈতিক সচিব ও সিটি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া টিউলিপ স্বীকার করেন, বাংলাদেশের দ্রুত পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তার জীবন ও ক্যারিয়ারে প্রভাব ফেলেছে।
তিনি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই অচেনা কিছু ওয়েবসাইটে তার বিরুদ্ধে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫০০ কোটি ডলার আত্মসাতের অভিযোগ প্রকাশ পেতে থাকে। ২০১৩ সালের এক ছবিতে শেখ হাসিনা ও ভ্লাদিমির পুতিনের পাশে দেখা গেলেও, টিউলিপ দাবি করেন— সেটি ছিল মস্কো সফরের শেষ দিনে দুই মিনিটের জন্য এক আনুষ্ঠানিক চা অনুষ্ঠানে দেখা।
আরও একটি অভিযোগ হলো— ২০০৪ সালে লন্ডনে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে তিনি বিনামূল্যে ফ্ল্যাট পেয়েছিলেন, যার সাথে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সম্পর্ক ছিল। এ অভিযোগও তিনি প্রত্যাখ্যান করেন।
ব্রিটেনে নৈতিক মানদণ্ডবিষয়ক তদন্তে তাকে অভিযোগমুক্ত ঘোষণা করা হলেও, পারিবারিক সম্পর্ক থেকে আসা ‘সুনামের ঝুঁকি’ সম্পর্কে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। টিউলিপ বলেন, “আমি জন্মসূত্রে কার ভাগনি, সেটা তো আমার হাতে নেই।”
স্টারমারের সমর্থন থাকা সত্ত্বেও সরকারে বিভ্রান্তি এড়াতে তিনি মন্ত্রিত্ব ছাড়েন, তবে ভবিষ্যতে ফেরার ইঙ্গিত পান। অভিযোগগুলো এখনো বন্ধ হয়নি, আর বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকেও সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা মেলেনি।
টিউলিপের ভাষায়— “আমি হাসিনা-ইউনূস দ্বন্দ্বের বলির পাঠা মাত্র। বাংলাদেশে অবশ্যই কিছু মানুষ অন্যায় করেছে এবং তাদের শাস্তি পাওয়া উচিত, কিন্তু আমি তাদের মধ্যে নই।”
এসআর
মন্তব্য করুন: