মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে আবারও আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির হুঁশিয়ারি দিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ভারতসহ এশিয়ার প্রযুক্তিনির্ভর দেশগুলোর জন্য নতুন করে বিপদের বার্তা বয়ে এনেছে তার সর্বশেষ ঘোষণা। এবার তিনি সেমিকন্ডাক্টর চিপ আমদানির ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন।
নিউ হ্যাম্পশায়ারে এক নির্বাচনী জনসভায় ট্রাম্প বলেন, “আমরা বাইরের দেশ থেকে সস্তায় জিনিস এনে নিজেদের শিল্প ধ্বংস করতে দিতে পারি না। চিপ উৎপাদন হবে আমেরিকার মাটিতে। বাইরে থেকে কেউ চিপ আনলে তাকে ১০০ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে।”
তার এই বক্তব্য ইতোমধ্যে ব্লুমবার্গ, রয়টার্স, সিএনবিসি, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়ে উঠেছে। রিপাবলিকান হেডকোয়ার্টার থেকেও তার বক্তব্যের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
ট্রাম্পের এই হুমকি সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে ভারতের ওপর। কারণ, দেশটি এখনও সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং অধিকাংশ প্রযুক্তি ও কাঁচামালের জন্য আমদানি নির্ভর। বর্তমানে ভারতের সেমিকন্ডাক্টর বাজারের আকার প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার এবং আগামী পাঁচ বছরে তা বেড়ে ১০০ থেকে ১১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
কিন্তু, পূর্ণাঙ্গ উৎপাদন অবকাঠামো না থাকায় তাইওয়ান, আমেরিকা ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানি করতেই হয় দেশের বেশিরভাগ চিপ। এ অবস্থায় আমদানি শুল্ক দ্বিগুণ হলে মোবাইল, ইলেকট্রনিক যন্ত্র, গাড়ি এমনকি চিকিৎসা সরঞ্জামের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এই ঘোষণার আগে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল কেনার কারণে ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছিল। আর এবার সেমিকন্ডাক্টর চিপের ওপর নতুন শুল্ক চাপের হুমকি বাজারকে আরও অস্থির করে তুলেছে।
ভারতের ‘India Semiconductor Mission’-এর আওতায় গুজরাট, কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুতে সেমিকন্ডাক্টর কারখানা স্থাপনের কাজ চলছে। টাটা, মাইক্রন, ফক্সকন এবং অ্যাম্প্যাকের মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে ট্রাম্পের শুল্ক নীতি যদি দ্রুত কার্যকর হয়, তাহলে এই উদ্যোগগুলোর ভবিষ্যত বড় ধরনের অনিশ্চয়তায় পড়ে যেতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, অভ্যন্তরীণ মার্কিন রাজনীতিতে ট্রাম্পের ‘অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ’ কৌশল তার নির্বাচনী সমর্থকদের কাছে কার্যকর হলেও বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য তা এক ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে। বিশেষ করে ভারতের মতো উদীয়মান অর্থনীতির জন্য এটি হতে পারে এক বড় ধাক্কা।
এসআর
মন্তব্য করুন: