আন্তর্জাতিক বাজারে ফের বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের রাশিয়া থেকে তেল আমদানিকে কেন্দ্র করে শুল্ক আরোপের হুমকি দেওয়ার পর বুধবার (৬ আগস্ট) বিশ্ববাজারে এই মূল্যবৃদ্ধি দেখা গেছে।
আরব নিউজ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৪৮ সেন্ট বা ০.৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮ দশমিক ১২ ডলারে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বেঞ্চমার্ক ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (WTI) তেলের দাম ৪৩ সেন্ট বা ০.৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫ দশমিক ৫৯ ডলার।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ান তেলের ক্রেতাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য গৌণ নিষেধাজ্ঞা বা শুল্ক আরোপের শঙ্কা বাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
আইএনজির পণ্য বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, শুধু ভারত নয়—চীনের রুশ তেল আমদানিও ভবিষ্যতে মার্কিন নজরদারির আওতায় আসতে পারে। তাদের মতে, ভারত এককভাবে রুশ তেল আমদানি বন্ধ করলেও বাজার সামাল দেওয়া সম্ভব, কিন্তু একাধিক দেশ একযোগে আমদানি বন্ধ করলে তা বড় ধরনের সরবরাহ সংকট তৈরি করতে পারে।
এর আগে মঙ্গলবার টানা চার দিন দরপতনের পর বিশ্ববাজারে উভয় ধরনের তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১ ডলারের বেশি কমে পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্নে পৌঁছেছিল। সেই পতনের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে ওপেক প্লাস জোটের আসন্ন উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনাকে।
রোববার ওপেক প্লাস ঘোষণা দিয়েছে, তারা প্রতিদিন অতিরিক্ত ৫ লাখ ৪৭ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন করবে। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের উৎপাদন হ্রাসের নীতির পরিবর্তন ঘটাতে যাচ্ছে সংস্থাটি। বিশ্বব্যাপী মোট তেলের প্রায় অর্ধেক উৎপাদন করে এই জোট।
নোমুরা সিকিউরিটিজের অর্থনীতিবিদ ইউকি তাকাশিমা বলেন, “বিনিয়োগকারীরা এখন নজর রাখছেন ভারত রুশ তেল আমদানি কমায় কি না। যদি কমায়, তবে সরবরাহ সংকট সৃষ্টি হতে পারে। তবে আমদানি অব্যাহত থাকলে আগস্টজুড়ে WTI-এর দাম ৬০ থেকে ৭০ ডলারের মধ্যে থাকতে পারে।”
এদিকে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে চাপ প্রয়োগের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে রুশ তেল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ভারত যদি রুশ তেল কেনা অব্যাহত রাখে, তবে তাদের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হবে। তার দাবি, জ্বালানির দাম কমলে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধ বন্ধ করতে বাধ্য হবেন।
তবে নয়াদিল্লি মার্কিন হুমকিকে ‘অযৌক্তিক’ আখ্যায়িত করে বলেছে, তারা জাতীয় অর্থনৈতিক স্বার্থে জ্বালানি আমদানির সিদ্ধান্ত নেবে।
এদিকে, আমেরিকান পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউটের (API) তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে কাঁচা তেলের মজুত ৪২ লাখ ব্যারেল হ্রাস পেয়েছে, যেখানে রয়টার্সের জরিপে পূর্বাভাস ছিল মাত্র ৬ লাখ ব্যারেলের ঘাটতির।
বুধবার (৬ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য প্রশাসন (EIA) তাদের সাপ্তাহিক মজুতসংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবে।
এসআর
মন্তব্য করুন: