[email protected] মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫
৭ শ্রাবণ ১৪৩২

যুক্তরাজ্যে তড়িঘড়ি করে সম্পত্তি বিক্রি করে দিচ্ছেন আ.লীগ নেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০ জুলাই ২০২৫ ৮:৫৭ পিএম

সংগৃহীত ছবি

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত সাবেক ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের বিলাসবহুল সম্পত্তি বিক্রি, হস্তান্তর ও পুনঃঋণায়নের (রিফাইন্যান্স) প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে।

এ নিয়ে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান এবং আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (TI)–এর এক যৌথ অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বিস্ময়কর সব তথ্য।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে, যার বড় একটি অংশের গন্তব্য ছিল যুক্তরাজ্য। এই অর্থপাচারের সঙ্গে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হয়।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই যুক্তরাজ্যে সম্পত্তি লেনদেনের গতি বেড়ে যায়। বিশেষ করে লন্ডনের নাইটসব্রিজ, রিজেন্টস পার্ক, গ্রোসভেনর স্কয়ারসহ অভিজাত এলাকায় ব্যাপক সম্পদ হস্তান্তর, বিক্রয় এবং ফ্রিজিংয়ের ঘটনা ঘটে।

২০২৪ সালের মে মাসে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (NCA) প্রায় ১ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা মূল্যের একটি অ্যাপার্টমেন্ট জব্দ করে, যার মালিকানা ছিল সাবেক বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান রহমান এবং ভাতিজা আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের নামে।

এছাড়া সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নামে থাকা প্রায় ২ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকার ৩০০টিরও বেশি সম্পত্তি জব্দ করা হয়।

 

  • বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান নাইটসব্রিজের চারতলা একটি বাড়ি (মূল্য ৭.৩৫ মিলিয়ন পাউন্ড) হস্তান্তরের পর বিক্রি করে দেন একটি গোপন অফশোর কোম্পানির কাছে।
  • তার ভাই শাফিয়াত সোবহান সারে ভার্জিনিয়া ওয়াটারের ৮ মিলিয়ন পাউন্ডের একটি ম্যানসনের মালিকানা বদলান।
  • সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ভাই আনিসুজ্জামান রিজেন্টস পার্কের একটি টাউনহাউস (মূল্য ১০ মিলিয়ন পাউন্ড) জুলাইয়ে বিক্রি করেন এবং আরও তিনটি সম্পত্তির জন্য রিফাইন্যান্স আবেদন করেন।
  • গ্রোসভেনর স্কয়ারে সালমান এফ রহমান পরিবারের মালিকানাধীন ৩৫ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ইতোমধ্যেই NCA কর্তৃক ফ্রিজ করা হয়েছে।

 

সালমান এফ রহমানের পরিবারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রতিশোধপরায়ণ মনোভাবের কারণে আমাদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হচ্ছে। আমরা যেকোনো তদন্তে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।”

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন যুক্তরাজ্য সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন, যতদিন তদন্ত চলবে ততদিন যেন এসব সম্পত্তি বিক্রি, স্থানান্তর বা বন্ধক না রাখা হয়।

গভর্নর মনসুর বলেন, “আমরা নিশ্চিত, অনেকে ইতোমধ্যেই সম্পত্তি বিক্রির চেষ্টা করছেন। এসব সম্পদ দ্রুত ফ্রিজ করা জরুরি।”

 

ব্রিটিশ সংসদের অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের দুর্নীতিবিষয়ক প্রধান জো পাওয়েল বলেন, “ইতিহাস বলছে, যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, দুর্নীতিবৃত্ত সম্পদ মুহূর্তেই লুকিয়ে ফেলা যায়। লন্ডন যেন দুর্নীতিবাজদের আশ্রয়স্থলে পরিণত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।”

 

অনুসন্ধানে আরও প্রশ্ন তোলা হয়েছে—এই বিপুল সম্পত্তি লেনদেনের সময় যুক্তরাজ্যের আইনজীবী, হিসাবরক্ষক ও সম্পদ ব্যবস্থাপকদের ভূমিকা কতটা স্বচ্ছ ছিল। সংশ্লিষ্টদের সতর্কতা ও যাচাইবাছাই নিয়েও উঠছে সন্দেহ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অনুসন্ধান শুধু বাংলাদেশে রাজনৈতিক দুর্নীতির চিত্রই নয়, বরং আন্তর্জাতিকভাবে যুক্তরাজ্যের নৈতিক দায়িত্ব ও জবাবদিহির প্রশ্নও সামনে এনে দিয়েছে।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর