[email protected] রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫
৫ শ্রাবণ ১৪৩২

লাক্ষাদ্বীপে প্রতিরক্ষা ঘাঁটি স্থাপন করছে ভারত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯ জুলাই ২০২৫ ৮:০৩ পিএম
আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২৫ ৮:০৫ পিএম

সংগৃহীত ছবি

দক্ষিণ ভারতের কেরালা উপকূলের কাছে আরব সাগরের মাঝে ছড়িয়ে থাকা ৩৬টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত লাক্ষাদ্বীপ এখন ভারতের সামরিক কৌশলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠছে।

এই দ্বীপপুঞ্জের উত্তর-পশ্চিমাংশে অবস্থিত বিত্রা দ্বীপে প্রতিরক্ষা ঘাঁটি স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে ভারত সরকার।

সম্প্রতি (১১ জুলাই) কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটির রাজস্ব বিভাগ এক সরকারি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, বিত্রা দ্বীপ প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত কাজে ব্যবহারের জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় দেওয়া হবে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকনমিক টাইমস জানিয়েছে, বর্তমানে বিত্রা দ্বীপে প্রায় ১০৫টি পরিবার বসবাস করে। দ্বীপটি মূলত আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত। এখন এই দ্বীপকে কেন্দ্র করে জাতীয় নিরাপত্তা ও সামুদ্রিক কৌশলের গুরুত্বকে সামনে রেখে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগোচ্ছে নয়াদিল্লি।

লাক্ষাদ্বীপের ভৌগোলিক অবস্থান কৌশলগতভাবে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ। এই দ্বীপপুঞ্জের আশপাশ দিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক জাহাজের ব্যাপক চলাচল রয়েছে, যা সমুদ্রপথে নজরদারি ও নৌ-অভিযানে লাক্ষাদ্বীপকে একটি কৌশলগত কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
বিত্রা দ্বীপ থেকে আকাশপথে পাকিস্তানের করাচি শহরের দূরত্ব প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার—এই ভৌগোলিক নিকটতা দ্বীপটির কৌশলগত গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তোলে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মালদ্বীপে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং বেইজিংয়ের নজরদারির জবাবে ভারত লাক্ষাদ্বীপে সামরিক উপস্থিতি জোরদার করতে চায়। বিশেষ করে ভারতের দক্ষিণ উপকূলরেখার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিত্রায় প্রতিরক্ষা ঘাঁটি স্থাপন একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

তবে কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্ত ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিরোধিতা ও জনঅসন্তোষ। লাক্ষাদ্বীপের কংগ্রেস এমপি হামদুল্লাহ সাইদ বলেছেন, “বিত্রার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ধ্বংস করতে কেন্দ্রীয় সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি দ্বীপবাসীর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি এবং রাজনৈতিক ও আইনি লড়াই চালিয়ে যাব।”

তিনি অভিযোগ করেন, স্থানীয় জনগণের মতামত না নিয়েই এই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিপূরণ বা পুনর্বাসনের বিষয়েও কোনো পরিকল্পনা সরকার নেয়নি বলে দাবি করেন তিনি।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের শুরুতে ভারত-মালদ্বীপ সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে ভারতের পর্যটকরা মালদ্বীপ বয়কটের ডাক দেয়। এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লাক্ষাদ্বীপ সফর করে দ্বীপটিকে বিকল্প পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরেন। এর পর থেকেই লাক্ষাদ্বীপের কৌশলগত গুরুত্ব নতুন করে আলোচনায় আসে।

সাম্প্রতিক সময়ে জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কেও আবার উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় পশ্চিম দিকের সমুদ্রসীমায় নজরদারি জোরদার করতে চাইছে ভারত। আর সেই লক্ষ্যেই দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে বিত্রা দ্বীপে প্রতিরক্ষা ঘাঁটি স্থাপনের কার্যক্রম।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর