মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলে একটি বৌদ্ধ মঠে সামরিক জান্তা বাহিনীর বিমান হামলায় অন্তত ২৩ জন সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছেন।
নিহতদের মধ্যে চার শিশু রয়েছে, এবং আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩০ জন। আহতদের মধ্যে অন্তত ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রতিরোধ যোদ্ধারা ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) রাত ১টার দিকে সাগাইং অঞ্চলের লিন তা লু গ্রামে এ হামলা চালানো হয়। অঞ্চলটি মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয় থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত।
স্থানীয় প্রতিরোধ গোষ্ঠীর একজন সদস্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-কে জানান, একটি সামরিক জেট বিমান থেকে নিক্ষিপ্ত বোমা বৌদ্ধ মঠে সরাসরি আঘাত হানে। মঠটিতে চলমান সংঘর্ষ থেকে পালিয়ে আসা প্রায় দেড় শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল।
তিনি জানান, নিহতদের মধ্যে চার শিশু ছাড়াও নারী ও বৃদ্ধরাও রয়েছেন। আহত ৩০ জনের অনেকেই পুড়ে যাওয়া, বোমার আঘাতে ছিন্নভিন্ন ও ছররা বিদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন।
এই হামলা নিয়ে এখনো পর্যন্ত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য আসেনি। তবে অতীতে সেনাবাহিনী দাবি করে এসেছে, তারা কেবল "বৈধ হুমকি" বা "সন্ত্রাসী" প্রতিরোধ যোদ্ধাদের লক্ষ্য করেই হামলা চালায়।
বিরোধী গোষ্ঠী ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি)-এর মুখপাত্র নেই ফোন লাত এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, বছরের শেষদিকে অনুষ্ঠেয় কথিত নির্বাচনের আগে সেনাবাহিনী জনগণ ও প্রতিরোধ যোদ্ধাদের দমন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, “নির্বাচনের নামে সেনা সরকার শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে চাইছে।”
সাগাইং অঞ্চল মিয়ানমারে সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। গত কয়েক মাসে এই অঞ্চলে একাধিকবার বড় আকারের সামরিক অভিযান ও বিমান হামলা চালিয়েছে জান্তা বাহিনী। হামলার লক্ষ্য মূলত প্রতিরোধ যোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকা পুনর্দখল করা।
প্রতিরোধ যোদ্ধারা বলছেন, হামলার মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে সেনাবাহিনী যুদ্ধবিমান ও ট্যাংক ব্যবহার করে আক্রমণ চালাচ্ছিল। তবে তাদের সীমিত সামর্থ্যের কারণে বিমান হামলার বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরক্ষা গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই হামলাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে আখ্যা দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে আসছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সুচির নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে দেশটিতে সহিংসতা, হত্যা ও বাস্তুচ্যুতি ভয়াবহভাবে বেড়ে গেছে।
লিন তা লু গ্রামের এই বৌদ্ধ মঠে আশ্রয় নেওয়া অধিকাংশ মানুষই আশপাশের গ্রাম থেকে পালিয়ে আসা নিরীহ নাগরিক, যারা সংঘর্ষ থেকে বাঁচতে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই আশ্রয়স্থলই রক্তাক্ত হয়ে ওঠে।
এসআর
মন্তব্য করুন: