মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন আর নিশ্চিন্তে সূর্যস্নান করতে পারবেন না—এমনই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা জাওয়াদ লারিজানি।
ফ্লোরিডার মার-আ-লাগো প্রাসাদে ছাদে শুয়ে রোদ পোহানো অবস্থায় ছোট একটি ড্রোন তার ওপর বিস্ফোরিত হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ইরানি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে লারিজানি বলেন, "ট্রাম্প এমন কিছু করেছেন, যার জন্য তিনি আর নিরাপদভাবে রোদ পোহাতে পারবেন না। এমনকি একটি ছোট ড্রোন হয়তো তার নাভিতেই আঘাত হানতে পারে। বিষয়টি অত্যন্ত সহজ।"
ইরান-ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, জাওয়াদ লারিজানি ইরানের প্রভাবশালী লারিজানি পরিবারের সদস্য এবং আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির দীর্ঘদিনের উপদেষ্টা।
এই হুমকির পটভূমিতে রয়েছে ‘ব্লাড প্যাক্ট’ নামের একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, যা ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনিকে নিয়ে ব্যঙ্গ বা হুমকি দেওয়ার বিরুদ্ধে ‘প্রতিশোধ’ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তারা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে একটি ফান্ড গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে, যার লক্ষ্যমাত্রা ১০ কোটি ডলার। ইতিমধ্যে ৪ কোটির বেশি ডলার সংগ্রহের দাবি করেছে তারা।
ওয়েবসাইটটির হোমপেজে লেখা রয়েছে: "যারা আল্লাহর শত্রু এবং সর্বোচ্চ নেতার জীবন হুমকির মুখে ফেলেছে, তাদের বিচারের আওতায় আনতে যারা সক্ষম হবেন, তাদের জন্য পুরস্কার রয়েছে।"
ইরানের বিপ্লবী গার্ডের ঘনিষ্ঠ ফার্স নিউজ এজেন্সি এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছে এবং দেশ-বিদেশের ইসলামি গোষ্ঠীগুলোকে পশ্চিমা দূতাবাস ও জনসমাগমস্থলে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে, ইরানের কিছু শীর্ষ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা ট্রাম্প এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ‘মোহারেবেহ’ (আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ) শাস্তির দাবি তুলেছেন। ইরানি আইন অনুযায়ী, এই অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
তবে সদ্য নির্বাচিত ইরানি প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান এসব হুমকি ও উদ্যোগ থেকে নিজের সরকারকে স্পষ্টভাবে পৃথক করেছেন। সম্প্রতি মার্কিন রাজনৈতিক বিশ্লেষক টাকার কার্লসনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “এই ফতোয়া বা হুমকির সঙ্গে ইরানি সরকার বা সর্বোচ্চ নেতার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।”
তবে দেশটির কট্টরপন্থী পত্রিকা কায়হান প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানের বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করে লিখেছে, “এটি মতামত নয়, বরং ধর্মীয় দায়িত্ব ও বিশ্বাসের বিষয়।”
পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরানের সাবেক সংসদ সদস্য গোলামআলি জাফারজাদেহ ইমানাবাদী বলেন, “ট্রাম্পকে হত্যার ডাক দিয়ে যদি কোনো প্রতিক্রিয়া আসে, তার দায় ইরানি জনগণকেই নিতে হবে।”
জবাবে কায়হান লিখেছে, “আজ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া ইরানের জাতীয় প্রয়োজন। ইমানাবাদীর বক্তব্যই ইরানি চেতনার বিরুদ্ধে।”
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ইরাকের বাগদাদে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হন ইরানের অভিজাত কুদস ফোর্সের প্রধান জেনারেল কাসেম সোলেইমানি। সেই হামলার অনুমোদন দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই থেকেই ইরানে তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও প্রতিশোধের দাবি চরমে।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, সোলেইমানি হত্যার প্রতিশোধ নিতে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী একাধিকবার ট্রাম্পকে টার্গেট করে হামলার পরিকল্পনা করেছে। এখন নতুন করে অনলাইন হুমকি, অর্থ তহবিল সংগ্রহ এবং ধর্মীয় নির্দেশনার দাবি পুরো পরিস্থিতিকে আবারো উত্তপ্ত করে তুলেছে।
এসআর
মন্তব্য করুন: