লোহিত সাগরে আবারও উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা।
সমুদ্রপথে চলাচলকারী একটি গ্রিক মালবাহী জাহাজে ভয়াবহ হামলা চালিয়ে সেটিকে ডুবিয়ে দেওয়ার দাবি করেছে গোষ্ঠীটি। ২০২৫ সালে এটি হুতিদের প্রথম বড় ধরনের সামুদ্রিক হামলা।
হুতিদের দাবি, লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী ‘ম্যাজিক সিজ’ নামের জাহাজটিই তাদের টার্গেট ছিল। হামলার সময় গুলি, রকেট ও দূরনিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরকবাহী নৌকা ব্যবহার করা হয়। তবে হামলার আগে জাহাজটির ১৯ নাবিককে নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। রোববার (৬ জুলাই) হামলাটি চালানো হয় বলে জানিয়েছে হুতি গোষ্ঠী।
তবে হামলার পর জাহাজটির মালিকানাধীন গ্রিক কোম্পানি স্টেম শিপিং এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘জাহাজটি আদৌ সম্পূর্ণ ডুবে গেছে কি না, তা নিশ্চিত নয়।’ আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স-ও এ তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।
হামলার পরপরই জাহাজ থেকে জরুরি সংকেত পাঠানো হলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের এডি পোর্টস গ্রুপ মালিকানাধীন উদ্ধারকারী জাহাজ সাফিন প্রিজম ঘটনাস্থলে গিয়ে জাহাজটির ২২ আরোহীকে উদ্ধার করে। এর আগে নিকটবর্তী আরেকটি বাণিজ্যিক জাহাজ প্রথমে নাবিকদের উদ্ধার করে এবং জিবুতির দিকে যাত্রা করে।
স্টেম শিপিংয়ের প্রতিনিধি মাইকেল বুদোরোগলু জানান, হামলার পরপরই জাহাজে পানি ঢুকতে শুরু করে, ফলে সেটি ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে। ‘ম্যাজিক সিজ’ জাহাজটি চীন থেকে লোহা ও সার বহন করে তুরস্কের উদ্দেশে যাচ্ছিল।
এই হামলার মধ্য দিয়ে লোহিত সাগরে গত ছয় মাস ধরে চলা আপাত শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতির ইতি ঘটলো। ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিক থেকে শুরু করে ২০২৪ সালজুড়ে হুতি বিদ্রোহীরা একের পর এক বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালিয়ে আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। এতে ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যকার পণ্য পরিবহন ব্যবস্থায় গুরুতর বিঘ্ন ঘটে এবং সুয়েজ খালের বিকল্প পথ ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি হয়।
হুতিরা আগেও জানিয়েছিল, ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও গাজাবাসীর প্রতি সংহতির অংশ হিসেবে তারা লোহিত সাগর, এডেন উপসাগর এবং বাব আল-মান্দেব প্রণালিতে ১০০টিরও বেশি জাহাজে হামলা চালিয়েছে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সর্বশেষ বড় ধরনের হামলার পর চলতি বছর হুতিদের তেমন কোনো আক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি। কিন্তু নতুন করে এই হামলার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক নৌপথে নিরাপত্তা ইস্যুটি আবারও সামনে চলে এসেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের হামলা শুধু সাময়িক নিরাপত্তা হুমকি নয়, বরং বৈশ্বিক বাণিজ্য রুটগুলোকেও দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক নৌ নিরাপত্তা জোটগুলোর তৎপরতা আরও জোরদার করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
এসআর
মন্তব্য করুন: