ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) এক শীর্ষ উপদেষ্টা দেশটির সমরাস্ত্র, বিশেষ করে ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডার নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশ করেছেন।
তার দাবি, ইরানের সামরিক সক্ষমতা এতটাই শক্তিশালী যে, দুই বছর ধরে প্রতিদিন শত্রুপক্ষের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করলেও, দেশটির ভাণ্ডারে কোনো ঘাটতি দেখা যাবে না।
সম্প্রতি ইসরাইলের এক সামরিক কর্মকর্তা দাবি করেছিলেন, ইরানের কাছে বর্তমানে ২,০০০ থেকে ২,৫০০ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সংঘর্ষ পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যেতে পারে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। যদিও ইরান কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা প্রকাশ করেনি, বরং সবসময়ই একে গোপনীয়তার মধ্যে রেখেছে।
ইরানের আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা মেহের নিউজ-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আইআরজিসি উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইব্রাহিম জাব্বারি বলেন,
“শহীদ জেনারেল হাজিজাদেহ (যিনি ইসরাইলি হামলায় নিহতের আগে আইআরজিসি এরোস্পেস ফোর্সের প্রধান ছিলেন) একবার বলেছিলেন—যদি ইরান, ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ হয়, তাহলে আমরা যদি দুই বছর ধরে প্রতিদিন ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ি, তবুও আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডারে ঘাটতি দেখা দেবে না।”
তিনি আরও জানান, ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এখনো পুরোপুরি প্রকাশ পায়নি।
“আমাদের ভূগর্ভস্থ গুদাম, ক্ষেপণাস্ত্র শহর এবং প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো এতটাই বিশাল ও উন্নত যে, এখনো দেশের বেশিরভাগ প্রতিরক্ষা অবকাঠামো বিশ্বের সামনে প্রকাশ করা হয়নি।”
জেনারেল জাব্বারি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন,
“যদি ইহুদি শত্রু আমাদের দেশে যুদ্ধ শুরু করে, তবে সেটি তাদের জন্য একটি দর্শনীয় দিন হয়ে উঠবে। আমাদের সেনাবাহিনী, আইআরজিসি এবং বিমান ও স্থল বাহিনী পূর্ণ শক্তি নিয়ে ময়দানে নামবে।”
গত ১৩ জুন ইসরাইলের এক হামলার জবাবে ইরান অপারেশন ট্রু প্রমিজ-থ্রি চালু করে। এই অভিযানে প্রথমবারের মতো দেশটি দূরপাল্লার অত্যাধুনিক ‘সিজ্জিল’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের দাবি করে।
সিজ্জিল ক্ষেপণাস্ত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো কঠিন জ্বালানি প্রযুক্তি, যা এই মিসাইলকে খুব কম সময়ের মধ্যে উৎক্ষেপণ করতে সক্ষম করে তোলে। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এটি তাৎক্ষণিক ও কার্যকর প্রতিক্রিয়ার জন্য অত্যন্ত উপযোগী বলে মনে করেন সামরিক বিশ্লেষকরা।
এছাড়া ইরানের অস্ত্রভাণ্ডারে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, যেমন হোভেইজেহ, যা সম্প্রতি ইসরাইলের বিরুদ্ধে চলমান হামলায় ব্যবহৃত হয়েছে।
আল–জাজিরার সামরিক বিশ্লেষক গ্যাটোপুলোস বলেন,
“ইরানের হাতে এখন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। এটি মূলত তাদের দীর্ঘদিনের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিরই উন্নত সংস্করণ। এমন অস্ত্র প্রতিহত করা অত্যন্ত কঠিন।”
ইরান বরাবরই তাদের সমরনীতিকে আত্মরক্ষামূলক বলে দাবি করলেও, এ ধরনের তথ্য ও অস্ত্র প্রদর্শন স্পষ্টতই মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে নতুন উত্তেজনার ইঙ্গিত দেয়।
এসআর
মন্তব্য করুন: