ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সাম্প্রতিক সামরিক উত্তেজনার জেরে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (IAEA) সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে ইরান।
এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরপরই সংস্থাটির একদল পরিদর্শক ইরান ত্যাগ করেছেন।
শুক্রবার (৪ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ দেওয়া এক বিবৃতিতে IAEA জানায়, তাদের পরিদর্শক দল সংস্থার সদর দপ্তর অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় ফিরে যাচ্ছে।
সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি বলেন, “আমরা চাই ইরান যত দ্রুত সম্ভব IAEA-এর পর্যবেক্ষণ ও যাচাই কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে দিক। এজন্য তেহরানের সঙ্গে সংলাপ আবারও চালু করা জরুরি।”
তেহরান থেকে আলজাজিরার প্রতিনিধি রেসুল সেরদার জানান, কতজন পরিদর্শক ইরান ছেড়েছেন—তা স্পষ্ট নয়। আইএইএর বিবৃতি থেকে ধারণা করা হচ্ছে, হয়তো কেবল একটি অংশ চলে গেছেন, বাকিরা এখনও ইরানেই অবস্থান করছেন। তিনি আরও জানান, পরিদর্শকরা বিমানে চড়েননি, বরং আর্মেনিয়া হয়ে সড়কপথে ভিয়েনায় ফিরেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার মতে, এই ঘটনা ইরানে একটি নতুন ‘পারমাণবিক অনিশ্চয়তার যুগ’-এর সূচনা করছে।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে ইরান-ইসরায়েল সামরিক উত্তেজনার মধ্যে পরিদর্শকরা তেহরানে অবস্থান করছিলেন। গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের একাধিক সামরিক ঘাঁটি ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। পাল্টা জবাবে ইরানও ইসরায়েল লক্ষ্য করে হামলা চালায় এবং পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে ওঠে। সংঘাতে যুক্ত হয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রও, যারা ইরানের কয়েকটি স্থাপনায় ‘বাঙ্কার-বাস্টিং’ বোমা ব্যবহার করে হামলা চালায়।
এই ঘটনার পরপরই ইরান আইএইএ-এর প্রতি আস্থা হারানোর কথা জানায় এবং সংস্থার সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা স্থগিতের ঘোষণা দেয়। যদিও দেশটি এখনো পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধে স্বাক্ষরিত আন্তর্জাতিক চুক্তি ‘এনপিটি’র (NPT) প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানায়।
ইরানি নেতারা দাবি করেছেন, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার সময় IAEA নীরব ছিল। বরং হামলার ঠিক একদিন আগে, ১২ জুন, সংস্থাটি একটি প্রস্তাব পাস করে যেখানে ইরানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পরমাণু নীতিমালার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়।
উল্লেখ্য, গত বুধবার ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান IAEA-এর সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা স্থগিতের সরকারি নির্দেশ জারি করেন। এর আগেই দেশটির পার্লামেন্টে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাস হয়, যা পরে ‘গার্ডিয়ান কাউন্সিল’ কর্তৃক অনুমোদিত হয়।
গার্ডিয়ান কাউন্সিলের মুখপাত্র হাদি তাহান নাজিফ বলেন, “ইরানের জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
এসআর
মন্তব্য করুন: