[email protected] শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫
১৯ আষাঢ় ১৪৩২

শত কোটি টাকার সড়কের মাঝখানে গাছ! আতঙ্কে পথচারী ও চালকেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৩০ জুন ২০২৫ ৯:০৬ পিএম

সংগৃহীত ছবি

চিত্রটা যেন অবিশ্বাস্য—মসৃণ ও প্রশস্ত নতুন সড়ক, কিন্তু মাঝখানেই দাঁড়িয়ে আছে একের পর এক গাছ! ভারতে সম্প্রতি এমনই এক বিস্ময়কর দৃশ্য দেখা গেছে বিহার রাজ্যের জেহানাবাদ জেলায়।

পাটনা থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে, প্রায় ১০০ কোটি রুপি ব্যয়ে নির্মিত এই সড়ক এখন পরিচিতি পেয়েছে ‘মরণফাঁদ’ কিংবা ‘সাজানো মৃত্যুপুরী’ নামে।

সড়কটি পাটনা-গয়া প্রধান সড়কের সম্প্রসারিত অংশ, যার দৈর্ঘ্য ৭.৪৮ কিলোমিটার। কিন্তু সেই সড়ক জুড়ে মাঝপথেই রয়েছে বহু গাছ, যেগুলো গাড়িচালকদের বাধ্য করছে প্রতিনিয়ত ‘জিগজ্যাগ’ কায়দায় চালাতে। যেন বাস্তব কোনো রেসিং ভিডিও গেমে অংশ নিচ্ছেন তারা—তফাত শুধু, এখানে একটুও ভুল মানে হতে পারে প্রাণহানি।

কেন এই অদ্ভুত পরিস্থিতি?

জেলা প্রশাসন সড়ক সম্প্রসারণের সময় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে বন বিভাগের কাছে আবেদন করে। কিন্তু বন বিভাগ সে অনুমতি না দিয়ে চেয়ে বসে ১৪ হেক্টর বনভূমির ক্ষতিপূরণ। প্রশাসন সেই দাবি পূরণে অক্ষম হওয়ায় তারা এক অদ্ভুত সিদ্ধান্ত নেয়—গাছ না কেটেই তাদের চারপাশ ঘিরে রাস্তা নির্মাণ!

ফলে দেখা যায়, সড়কের গায়ে গায়ে দাঁড়িয়ে আছে গাছ। কারও অবস্থান একটু বাঁয়ে, কারও ডানে, আবার কোনোটি একেবারে মাঝখানে। এই অবস্থায় কোনো একটি লেনে নিরাপদে ও স্থিরভাবে গাড়ি চালানো কার্যত অসম্ভব।

দুর্ঘটনা ঘটছেই, উদ্বেগ বাড়ছে

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সড়কটি চালুর পর থেকেই একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এক পথচারী বলেন, “প্রতিদিনই ভয়ে থাকি। কখন, কোথা থেকে কোন গাড়ি এসে ধাক্কা দেয়—তার কোনো ঠিক নেই। অথচ কর্তৃপক্ষ গাছ সরাতে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।”

এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে—যদি বড় ধরনের দুর্ঘটনায় কারও প্রাণহানি ঘটে, তবে দায়ভার কে নেবে? এখনো সে প্রশ্নের কোনো সুস্পষ্ট উত্তর নেই।

উন্নয়ন না অব্যবস্থাপনা?

বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিকল্পনার অভাব ও প্রশাসনিক সমন্বয়ের ঘাটতির কারণেই এমন ঘটনা ঘটছে। উন্নয়ন প্রকল্পে পরিবেশ রক্ষা অবশ্যই জরুরি, তবে তা যেন মানুষের জীবন হুমকিতে না ফেলে, তা নিশ্চিত করাও কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।


শেষ কথা:
শত কোটি রুপির প্রকল্প বাস্তবায়নে এমন মারাত্মক ত্রুটি শুধু প্রশ্ন তোলে প্রশাসনিক দায়দায়িত্ব নিয়ে নয়, বরং মানুষের জীবন ও নিরাপত্তা কতটা উপেক্ষিত হচ্ছে—তাও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর