রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সরাসরি ঘোষণা দিয়েছেন, ইউক্রেনের পুরো ভূখণ্ডকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্য নিয়েই তিনি এগোচ্ছেন।
২০২৫ সালের ২০ জুন সেন্ট পিটার্সবার্গ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামে দেওয়া ভাষণে পুতিন বলেন, “আমি বহুবার বলেছি—রুশ ও ইউক্রেনীয়রা এক জাতি। সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই বলছি, পুরো ইউক্রেনই আমাদের।”
‘রুশ সেনারা যেখানে পা রাখে, সেখানেই রাশিয়া’
আল-জাজিরার বরাতে জানা যায়, পুতিন আরও বলেন, “যেখানে রুশ সেনারা পা রাখে, সেই ভূখণ্ড রাশিয়ার অংশ হয়ে যায়। এটি কেবল একটি সামরিক কৌশল নয়, বরং ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ন্যায্যতার ভিত্তিতে আমরা একে দেখি।”
পুতিনের এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উদ্বেগের সঞ্চার করেছে। ইউক্রেনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রিই সিবিহা কড়া প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “রুশ সেনারা যেখানে যায়, সেখানেই মৃত্যু, ধ্বংস আর বিভীষিকা নিয়ে যায়।” তিনি রাশিয়ার এই আগ্রাসনকে ২১ শতকের সবচেয়ে ভয়াবহ নিরাপত্তা হুমকি বলে অভিহিত করেন।
জেলেনস্কির হুঁশিয়ারি ও ইউরোপের উদ্বেগ
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার টেলিগ্রাম বার্তায় বলেন, “পুতিন এবার আর কোনো মুখোশ পরে নেই। তিনি শুধু ইউক্রেনই নয়, বেলারুশ, বাল্টিক রাষ্ট্রসমূহ, মলদোভা, দক্ষিণ ককেশাস এবং এমনকি কাজাখস্তানকেও লক্ষ্যবস্তু করেছেন।”
জেলেনস্কির মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটো দেশগুলো নতুন করে সতর্ক হয়েছে। সম্প্রতি জার্মানির সামরিক বাহিনীর এক কৌশলগত প্রতিবেদনে পুতিনের সম্প্রসারণবাদী মনোভাবকে ইউরোপের ভূখণ্ডের জন্য ‘অস্তিত্বগত হুমকি’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া ক্রমেই ইউক্রেন সীমান্তে সেনা উপস্থিতি বাড়াচ্ছে, এবং পশ্চিমা সহায়তা অব্যাহত থাকলে যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
পুতিনের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপ ও কানাডা ইউক্রেনকে দেওয়া সামরিক সহায়তা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। ন্যাটোর নবনিযুক্ত মহাসচিব মার্ক রুটে জানান, ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে ইউরোপীয় দেশ ও কানাডা মিলিয়ে ইউক্রেনকে প্রায় ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, গোলাবারুদ, ড্রোন প্রযুক্তি এবং উন্নত নজরদারি সরঞ্জাম।
তিনি বলেন, “এই সহায়তা প্রমাণ করে—আমরা ইউক্রেনের পাশে আছি এবং রাশিয়ার আগ্রাসন কখনোই মেনে নেব না।”
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সামরিক সহায়তায় কিছুটা ভাটা পড়েছে। তবে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ‘প্যাট্রিয়ট’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
প্রসঙ্গে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “আমরা কিছু প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছি। তবে এই মুহূর্তে এসব সরঞ্জামের চাহিদা অনেক, এবং ইসরায়েলকেও তা সরবরাহ করতে হচ্ছে।”
রাশিয়ার পক্ষ থেকে আবারও পশ্চিমা দেশগুলোকে হুঁশিয়ার করা হয়েছে। শনিবার (২৮ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, “যারা যুদ্ধ থামাতে চায়, তাদের উচিত ইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়া বন্ধ করা। কিয়েভকে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করাই শান্তির পথে সবচেয়ে বড় বাধা।”
বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার এমন অবস্থান যুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। ইউক্রেন সীমাবদ্ধ না থেকে এই সংঘাত ভবিষ্যতে ইউরোপের আরও বিস্তৃত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলেও সতর্ক করেছেন তারা।
এসআর
মন্তব্য করুন: