[email protected] বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫
১১ আষাঢ় ১৪৩২

ইরানজুড়ে বিজয় উৎসব: যুদ্ধবিরতির পর উচ্ছ্বাসে জনতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৪ জুন ২০২৫ ৮:৪২ পিএম

সংগৃহীত ছবি

ইসরায়েল-ইরান টানা ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর ইরানজুড়ে পালিত হচ্ছে বিজয় উৎসব।

রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন শহরে জনতা রাস্তায় নেমে আনন্দ মিছিল করেছে, আগুন জ্বালিয়ে উদযাপন করেছে ‘জয়ের মুহূর্ত’।

মঙ্গলবার (২৪ জুন) যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। এরপরই ইরানের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব এই ঘটনাকে ‘ঐতিহাসিক বিজয়’ হিসেবে বর্ণনা করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পরপরই ইরানের বিভিন্ন প্রান্তে বিজয় র‍্যালি, সমাবেশ ও মিছিল শুরু হয়। রাজপথজুড়ে মুখরিত হয় বিপ্লবী স্লোগানে—‘আমেরিকা নিপাত যাক’, ‘ইসরায়েল ধ্বংস হোক’।

ইরানের সহরাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ রেজা আরেফ এক বিবৃতিতে বলেন, “এই বিজয়ের মাধ্যমে ইরান কেবল সামরিক নয়, কূটনৈতিকভাবেও প্রমাণ করেছে—আমেরিকা ও পশ্চিমা জোটের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। এটি ইরানের প্রকৃত শক্তির বহিঃপ্রকাশ।”

ইরানি সংসদের স্পিকার এবং সাবেক রেভল্যুশনারি গার্ড (আইআরজিসি) কমান্ডার মোহাম্মদ বাঘের গালিবাফের উপদেষ্টা মাহদি মোহাম্মাদি ‘এক্স’-এ এক পোস্টে লেখেন, “একটি নতুন যুগের সূচনা হলো। এই যুদ্ধবিরতি একটি যুগান্তকারী বিজয়।”

এদিকে, পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে নিজের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার মুখপাত্র বেহরুজ কামালভান্দি। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমাদের পারমাণবিক কর্মসূচি থামবে না। আমাদের সক্ষমতা ও বিজ্ঞানভিত্তিক অগ্রগতি কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না।”

বিশ্লেষকদের মতে, এই যুদ্ধবিরতি ইরানের জন্য কৌশলগতভাবে একটি বড় সফলতা। এতে সরাসরি সংঘাত থেকে সরে এসে তারা আলোচনার টেবিলে শক্ত অবস্থানে বসার সুযোগ পেয়েছে। একইসঙ্গে জনগণের কাছে নিজেদের সামরিক ও কূটনৈতিক দক্ষতা তুলে ধরার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।

তবে আন্তর্জাতিক মহলে যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ইরান-ইসরায়েল সম্পর্ক বহু দশকের বৈরিতা ও অনাস্থায় ভরপুর—ফলে এই বিরতি কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে, তা নিশ্চিত নয়।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের একটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। পাল্টা জবাবে ইরানও ইসরায়েলে হামলা চালায়। পরিস্থিতি চরমে পৌঁছালে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে যৌথভাবে ইরানের আরও তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এর জবাবে ইরান কাতার ও ইরাকে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।

শেষ পর্যন্ত, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন, যা ইরান ও ইসরায়েল উভয়ই মেনে নেয়।

ইরানি নেতৃত্বের ভাষ্য অনুযায়ী, এই যুদ্ধবিরতি শুধু সাময়িক বিরতি নয়, বরং এটি বিশ্ববাসীর সামনে তাদের প্রতিরোধ শক্তির এক জোরালো বার্তা। তাদের বিশ্বাস, এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে ইরানকে আরও শক্তিশালী ও আত্মবিশ্বাসী অবস্থানে নিয়ে এসেছে।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর