[email protected] মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫
২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

গাজামুখী ত্রাণবাহী জাহাজ আটক করল ইসরায়েল

প্রতিদিনের বাংলা ডেস্ক

প্রকাশিত: ৯ জুন ২০২৫ ১১:৩৭ এএম

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বাসিন্দাদের জন্য সাহায্য নিয়ে যাত্রা করা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের (এফএফসি) পরিচালিত ‘ম্যাডলিন’ নামের ত্রাণবাহী জাহাজটি আটক করেছে ইসরায়েল।

আল জাজিরার খবরে বলা হয়, ইতালি থেকে রওনা হওয়া জাহাজটি গাজার উপকূলে পৌঁছানোর আগেই আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে জোরপূর্বক ধরে এনে আশদাদ বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়।

জাহাজটিতে ছিলেন সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও পরিবেশকর্মীসহ মোট ১৩ জন। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছেন সুইডিশ পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, ফরাসি চিকিৎসক বাপতিস্ত আন্দ্রে, আল জাজিরার সাংবাদিক ওমর ফায়াদ, ব্রাজিলের ফ্রিডম ফ্লোটিলা সমন্বয়ক থিয়াগো অ্যাভিলা, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য রিমা হাসান, এবং তুর্কি মানবাধিকারকর্মী সুয়াইব ওর্দু। এছাড়া ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন ও নেদারল্যান্ডসের আরও কয়েকজন মানবিক কর্মীও ছিলেন।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্স-এ (সাবেক টুইটার) দেওয়া বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘সেলিব্রেটিদের বহনকারী তথাকথিত সেলফি জাহাজকে’ রবিবার মধ্যরাতে উপকূলে আনা হয়েছে এবং যাত্রীদের নিরাপদে হেফাজতে রাখা হয়েছে। তাদের খাবার ও পানি সরবরাহ করা হয়েছে বলেও জানায় তারা।

তবে ইসরায়েলি মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত একটি ভিডিও, যাতে যাত্রীদের ‘সেলফি ইয়ট’ বলে উপহাস করা হয়েছে, তা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাটগার্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আদিল হক। তিনি বলেন, এমন অপমানজনক আচরণ আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে যুদ্ধাপরাধ হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মুসলিম অধিকার সংগঠন ‘সিএআইআর’ এক বিবৃতিতে জানায়, ইসরায়েলের এই অভিযান রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও আন্তর্জাতিক জলদস্যুতার শামিল। সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক নিহাদ আওয়াদ অভিযোগ করেন, এই মানবিক মিশনে রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার এবং যাত্রীদের অপহরণ আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ফ্রানচেসকা আলবানিজ বলেন, গাজায় ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ অবৈধ, অবরোধ তুলে নেওয়া এবং ত্রাণ প্রবেশের সুযোগ দেওয়া উচিত। তিনি জানান, জাহাজ আটক হওয়ার ঠিক আগে ক্যাপ্টেনের সঙ্গে তার শেষবার যোগাযোগ হয়েছিল। ক্যাপ্টেন বলেছিলেন, “আরেকটি নৌকা আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে।” এরপরই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

ইসরায়েলি আগ্রাসন অব্যাহত ঈদেও
অন্যদিকে ঈদুল আজহার মধ্যেও গাজায় ইসরায়েলি হামলা থামেনি। ঈদের তৃতীয় দিন (৮ জুন) বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলায় বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। আনাদোলু এজেন্সি জানায়, হাসপাতালগুলোতে মৃতদেহের স্তূপ জমছে, আহতদের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে বাতাস।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৮ জনের মৃতদেহ ও ৩৯৩ জন আহতকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। চিকিৎসা সরঞ্জাম ও সক্ষমতার অভাবে আহতদের অনেকেই চিকিৎসা পাচ্ছেন না।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলমান ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৪,৮৮০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ২৬ হাজার ২২৭ জন আহত হয়েছেন। অনেকেই এখনও ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আছেন বলে জানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় আবারও অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। তখন থেকে ৪ হাজার ৬০৩ জন নিহত এবং ১৪ হাজার ১৮৬ জন আহত হয়েছেন। জানুয়ারির যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তি ভেঙে যাওয়ার পর হামলার মাত্রা বেড়েই চলেছে।

ফিলিস্তিন সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসেল জানান, গাজা সিটির বিভিন্ন এলাকায় কোনো সতর্কতা ছাড়াই ভবনে বোমা হামলা চালানো হচ্ছে, যা তিনি "পূর্ণাঙ্গ গণহত্যা" বলে উল্লেখ করেন। 

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর