[email protected] শুক্রবার, ৬ জুন ২০২৫
২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ঘোড়ায় চড়ে ৬,৫০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে তিন স্প্যানিশ মুসলিমের হজযাত্রা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৫ জুন ২০২৫ ১২:০৪ এএম

সংগৃহীত ছবি

আকাশ বা স্থলপথে নয়—ঘোড়ায় চড়ে সাত মাসে ৬,৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পবিত্র মক্কায় পৌঁছেছেন তিন স্প্যানিশ মুসলিম।

এই ব্যতিক্রমধর্মী হজযাত্রা শুধু ধর্মীয় দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যেই নয়, বরং একটি ঐতিহাসিক হজপথ পুনরুজ্জীবনের প্রয়াস হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।

বুধবার (৪ জুন) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।

দক্ষিণ স্পেনের আন্দালুসিয়ার আলমোনাস্তার লা রিয়ালে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মসজিদ থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবরে যাত্রা শুরু করেন তিন মুসলিম—আবদেলকাদির হারকাসি আইদি, তারেক রদ্রিগেজ এবং আবদাল্লাহ রাফায়েল হেরনান্দেজ মানচা। তাদের সঙ্গে শুরুতে ছিলেন মোহাম্মদ মেসবাহি, তবে যাত্রার শুরুর দিকেই ঘোড়ার স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে তাকে ফিরে যেতে হয়।

এই যাত্রাপথটি মূলত আন্দালুসীয় মুসলমানদের ঐতিহাসিক হজরুট, যা প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো। ইতিহাসবিদ হেরনান্দেজ মানচা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন ৩৬ বছর আগে, আর এই যাত্রার মধ্য দিয়ে নিজের দেওয়া প্রতিজ্ঞা বাস্তবায়ন করেছেন।

চার বছরের প্রস্তুতি শেষে যাত্রা শুরু হয়। ঘোড়া চালানো শেখা, আর্থিক জোগান নিশ্চিত করা, প্রয়োজনীয় অনুমতি সংগ্রহ—সব মিলিয়ে ছিল বড় একটি চ্যালেঞ্জ। খুজেস্তানি জাতের ঘোড়ায় চড়ে প্রতিদিন গড়ে ৪০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতেন তারা। নিজেরাই রান্না করতেন এবং রাতে ঘুমাতেন তাবুতে। অর্থ সংকটে পড়লে বিভিন্ন দেশের মানুষের সহানুভূতির ওপর নির্ভর করতে হয়েছে।

ফ্রান্স ও ইতালির বিভিন্ন ইকুয়েস্ট্রিয়ান সেন্টারে আশ্রয় নেওয়ার পাশাপাশি ইতালির ভারোনায় সৌদি ইনফ্লুয়েন্সার আবদুর রহমান আল-মুতাইরির দেয়া একটি ক্যারাভান তাদের বড় সহায়তা করে। বসনিয়া, সারায়েভো, সার্বিয়ার মুসলিম শহর নোভি পাজার এবং তুরস্কে তারা পান উষ্ণ আতিথেয়তা। রমজানে তুরস্কে অবস্থানকালে তারা সেখানকার মুসলিমদের সঙ্গে রোজা পালন ও ইফতার ভাগাভাগি করেছেন।

সিরিয়া, জেরুজালেম ও জর্ডান হয়ে সৌদি আরবে প্রবেশের সময় প্রশাসনিক কিছু জটিলতার কারণে তাদের ঘোড়াগুলো রিয়াদে রেখে মদিনায় যেতে হয়। সৌদি সরকার তাদের ফ্লাইট ও আতিথেয়তার ব্যবস্থা করে দেয়। মদিনা থেকে অবশেষে তারা মক্কায় পৌঁছান এবং হজের প্রস্তুতি নেন।

আবদেলকাদির হারকাসি আইদি বলেন,
“এই যাত্রা একরকম অসম্ভবই ছিল, কিন্তু আল্লাহর রহমতেই তা সম্ভব হয়েছে। আমরা শুধু হজ পালনের জন্য আসিনি, বরং স্প্যানিশ মুসলিমদের ঐতিহ্য ও পরিচয় বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে এসেছি।”

তবে এই অনন্য যাত্রার শেষপ্রান্তে একটি বিষণ্নতা রয়ে গেছে—ঘোড়াগুলো আর তাদের সঙ্গে ফিরবে না। দীর্ঘ যাত্রার ক্লান্তি এবং প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতার কারণে সেগুলোকে সৌদিতে রেখে উন্নত রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এই তিন সাহসী যাত্রীর কাহিনি কেবল একটি ব্যতিক্রমী হজযাত্রা নয়, বরং বিশ্বাস, ইতিহাস, ত্যাগ এবং মানবিক সংহতির এক অনন্য নিদর্শন হয়ে থাকবে।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর