মুসলিম বিশ্বের একমাত্র পরমাণু অস্ত্রধারী রাষ্ট্র পাকিস্তান।
এ কারণে বিশ্ব রাজনীতি ও আঞ্চলিক কূটনীতিতে ইসলামাবাদের অবস্থান সব সময়ই আলাদা গুরুত্ব বহন করে। মুসলিম বিশ্বের ঐক্য, সংহতি ও নিরাপত্তার প্রশ্নে পাকিস্তানের ভূমিকাকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মনে করেন বিশ্লেষকরা। সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের সঙ্গে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতা সেই ধারণাকে আরও পোক্ত করছে।
ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে পশ্চিমা আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা রেখে চলেছে ইরান। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে দৃঢ় অবস্থানটি তেহরানের। আত্মরক্ষার যুক্তিতে পরমাণু কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে দেশটি, যা নিয়ে ইসরায়েলের সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কা বাড়ছে।
এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের ইরান সফর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকে বলছেন, এই সফরের মাধ্যমে পাকিস্তান কি তাহলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের পাশে অবস্থান নিতে যাচ্ছে?
সফরের আগে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি এক বিবৃতিতে বলেন, গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা ঠেকাতে ইরান ও পাকিস্তানের একযোগে কাজ করা উচিত। বিশেষভাবে তিনি পাকিস্তানের পরমাণু সক্ষমতার প্রসঙ্গ তোলেন এবং মুসলিম বিশ্বে ঐক্যের আহ্বান জানান।
এই প্রেক্ষাপটেই শেহবাজ শরিফের তেহরান সফর হয়, যা দুই দেশের সম্পর্কে ‘নতুন যুগের সূচনা’ বলেই দেখা হচ্ছে। সফরের শুরুতেই ইরানি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তিনি। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে শেহবাজ জানান, ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচির প্রতি পূর্ণ সমর্থন থাকবে পাকিস্তানের। পাশাপাশি ইরান-পাকিস্তান সীমান্তে সন্ত্রাসবিরোধী যৌথ পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “পাকিস্তান কখনোই তাদের ভূখণ্ডকে ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেবে না।” এ সময় ইরানি প্রেসিডেন্ট বলেন, “গাজায় চলমান গণহত্যা বন্ধে পাকিস্তান ও ইরান ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে এবং পশ্চিমা বিশ্বের নির্লজ্জ নীরবতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।”
পরে আয়াতুল্লাহ খামেনির সঙ্গে পৃথক বৈঠকে শেহবাজ শরিফ বলেন, “পাকিস্তান সব সময় ইসরায়েলবিরোধী অবস্থানে অবিচল থেকেছে। গাজায় ৫৪ হাজার মানুষের নিহত হওয়া মানবতার জন্য গভীর কলঙ্ক।” জবাবে খামেনি বলেন, “যদি ইরান ও পাকিস্তান যৌথভাবে কাজ করে, তাহলে গাজায় ইসরায়েলি অপরাধ ঠেকানো সম্ভব।”
এছাড়া এই বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বাড়িয়ে দশ বিলিয়নে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সীমান্ত নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান এবং ইকোভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে কার্যকর সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন খামেনি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেলুচিস্তান ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলেও ইরান-পাকিস্তান সম্পর্ক বর্তমানে দ্রুতই ঘনিষ্ঠতার দিকে এগোচ্ছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।
এসআর
মন্তব্য করুন: